অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো। দীর্ঘ ১৮ বছরের অপেক্ষা, পরিশ্রম, হতাশা আর অগণিত ভক্তের প্রত্যাশার পর প্রথমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলো রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। মঙ্গলবার রাতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে রাজাত পাতিদারের নেতৃত্বাধীন দলটি। কিন্তু এই ঐতিহাসিক জয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন একজনই- বিরাট কোহলি।
শেষ বলটি হওয়ার পর মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন কোহলি। চোখে জল, মুখে প্রশান্তির হাসি। আইপিএলে নিজের পুরো ক্যারিয়ার একটি দলের সঙ্গেই কাটিয়েছেন যিনি, অবশেষে সেই দলের হয়েই হাতে তুললেন কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। আরসিবির প্রতি তার অনন্ত ভালোবাসা, অবিচল লয়্যালিটি- সব কিছুর যেন প্রাপ্য পুরস্কার মিলল এই এক রাতেই।
‘এই জয়টা সমর্থকদের জন্য, দলের জন্য,’ ম্যাচ শেষে বললেন কোহলি। ‘১৮ বছর অনেক লম্বা সময়। আমি এই দলের জন্য আমার যৌবন, প্রাইম টাইম, অভিজ্ঞতা- সবই দিয়েছি। প্রতি মৌসুমেই জয়ের চেষ্টা করেছি। এবার যে পেলাম, তা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। কখনো ভাবিনি এই দিনটা আসবে। শেষ বল হওয়ার পর আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। আমি আমার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি- এটা অসাধারণ অনুভূতি।’
কোহলি আরও বলেন, ‘এই শিরোপা যেমন দলের, তেমনি এবিডি-রও (ডি ভিলিয়ার্স)। ও যা কিছু করেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য, তা অতুলনীয়। আমি ওকে বলেছি- এই ট্রফিটা তোমারও। ও অবসরে গিয়েও এখনো দলের সবচেয়ে বেশি প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ জয়ের মালিক। এটা বলেই বোঝা যায় ওর প্রভাব কতটা গভীর ছিল আমাদের দলে, আমার ক্যারিয়ারেও।’
আরসিবির প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা নিয়েও সরাসরি বললেন কোহলি, ‘আমি এই দলের সঙ্গেই থাকব যতদিন আইপিএল খেলব। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে সরে দাঁড়াই, কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলাইনি। আমি পাশে ছিলাম, ওরাও আমাকে সমর্থন করেছে। সবসময় চেয়েছি এ দলটার হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে। অন্য দলের হয়ে এই শিরোপা জিতলে এতটা বিশেষ লাগত না। কারণ আমার হৃদয়টা বেঙ্গালুরুর সঙ্গে, আত্মাটা বেঙ্গালুরুর।’
আইপিএল ট্রফি তার জীবনের কোথায় রাখবেন? কোহলির সোজা উত্তর, ‘এটা নিঃসন্দেহে ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় মুহূর্ত। আইপিএল এখন বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম মর্যাদার টুর্নামেন্ট। আমি বড় মুহূর্তে জিততে ভালোবাসি। আর এই ট্রফিটা আমার জীবনে বড্ড বেশি মিসিং ছিল। আজ রাতে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারব- একদম শিশুর মতো।’
নিজের খেলার অনুপ্রেরণা নিয়েও খোলামেলা মন্তব্য করেন কোহলি, ‘আমি জানি, আর বেশি দিন খেলব না। তাই ক্যারিয়ারের শেষ দিনে যেন বলতে পারি-আমি সব দিয়েছি। শুধু ব্যাট হাতে নয়, ফিল্ডিংয়েও যেন পুরো ২০ ওভার মাঠে দাঁড়িয়ে থাকি, দলকে সাহায্য করি- এটাই চাই। আমি শুধু ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হতে চাই না, আমি পুরো খেলায় প্রভাব রাখতে চাই।’
কীভাবে এলো জয়?
ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৯০ রানে শেষ হয় আরসিবি। পাতিদার, কোহলিরা ছোট ছোট অবদান রাখেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাঞ্জাব কিংস ১৮৪ রানেই থেমে যায়। ক্রুনাল পান্ডিয়ার ম্যাচজয়ী স্পেল এবং যশ দয়াল, হ্যাজেলউড ও ভুবনেশ্বর কুমারের বোলিংয়ে থেমে যায় পাঞ্জাবের স্বপ্ন।
তবে স্কোরকার্ডের চেয়ে অনেক বড় হয়ে থাকল একটি দৃশ্য- মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়া কোহলি। এ যেন শুধুই একটি ম্যাচ নয়, এক অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং নতুন স্বপ্নের শুরু।
মন্তব্য করুন