কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিনে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দাপটে রীতিমতো কোণঠাসা বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে জুটি গড়তে ব্যর্থতা, বল হাতে ধারহীন—সব মিলিয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের দিন শেষে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘এটা ছিল সত্যিই কঠিন দিন।’
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা করতে পারেননি একটি ফিফটিও। সর্বোচ্চ রান এসেছে উদ্বোধনী ব্যাটার সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে—৪৬। দলের সর্বোচ্চ জুটি ছিল মাত্র ৬৭ রানের, সেটিও পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের মধ্যে। অথচ গল টেস্টে যেখানে ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরেছিল, সেখানে কলম্বোতে যেন সব এলোমেলো।
এর বিপরীতে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ছিল নিখুঁত ছন্দে। উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৮৮ রান। এরপর পাথুম নিশাঙ্কা ও দিনেশ চান্দিমালের ব্যাটে গড়ে ওঠে ১৯৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। দিন শেষ করে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান তুলে নেয় স্বাগতিকরা, বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ৪৩ রানে।
সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে সিমন্স বলেন, ‘গতকাল আমরা বড় কোনো জুটি গড়তে পারিনি। তাই আজ সকালে হাতে মাত্র দু-তিন উইকেট নিয়ে খেলতে নেমেছি। টেস্ট ম্যাচে ভালো জায়গায় যেতে হলে অন্তত দু-তিন ব্যাটারকে লম্বা ইনিংস খেলতে হয়। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। নিশাঙ্কা যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটি পরের ইনিংসের জন্য আমাদের শিক্ষার বিষয় হওয়া উচিত।’
তবে ব্যর্থতা ছিল কেবল ব্যাটিংয়ে নয়, বোলারদের কাছ থেকেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া আসেনি। একপ্রান্তে তাইজুল ইসলাম চাপ তৈরি করলেও অন্য প্রান্তে কেউ সেই চাপ ধরে রাখতে পারেননি। বিশেষ করে নতুন বলের বোলাররা শুরুতেই শ্রীলঙ্কার ওপেনারদের সহজে খেলতে দিয়েছেন।
‘বোলারদের জন্য দিনটা ছিল কঠিন। উইকেট অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল, ব্যাট করার পক্ষে অনুকূল। আমরা উইকেট পেতে অনেকটা সংগ্রাম করেছি। এটা টেস্ট ক্রিকেটে হয়, তবে আমাদের আরও সুশৃঙ্খল বোলিং দরকার ছিল,’ বলেন সিমন্স।
প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন উইকেট ছিল ব্যাটিংয়ের পক্ষে সহজ—এটি মেনেই নিয়েছেন কোচ। তার ভাষায়, ‘প্রথম দিন উইকেট ছিল স্টিকি, কিছু বল থেমে আসছিল। আজকের দিনে সে সমস্যা ছিল না। বল ভালোভাবে ব্যাটে এসেছে, টার্নও ছিল না। শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা তা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে।’
এখন প্রশ্ন, তৃতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় কী? বাংলাদেশের বোলারদের হাতে এখনো নতুন বল রয়েছে। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চাপে ফেলার শেষ সুযোগ এটিই।
সিমন্স আশাবাদী হলেও সতর্ক, ‘কাল সকালে আমাদের শুরুটা অনেক ভালো হতে হবে। উইকেট থেকে কেমন আচরণ পাই, তা বোঝার চেষ্টা করব। তারপর চেষ্টা করব এমন জায়গায় বল করতে, যেখান থেকে উইকেট আদায় সম্ভব। আজকের মতো ঢিলেঢালা বোলিং হলে সেটা আর হবে না।’
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে নিশাঙ্কা আছেন ১৪৬ রানে অপরাজিত। দিনেশ চান্দিমাল ফিরে গেছেন শতক হাতছাড়া করে। তবে হাতে এখনো ৮ উইকেট, লিড মাত্র শুরু—তৃতীয় দিনে সেই ব্যবধান কতটা বাড়ে, আর বাংলাদেশ কতটা লড়াইয়ে ফিরে আসে, সেটিই এখন দেখার।
মন্তব্য করুন