ওভাল টেস্টের চার নম্বর দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। সেই মুহূর্তে তিনি ভেবেছিলেন, ম্যাচ হয়তো ভারতের হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু পরদিন সকালে ভিন্ন চিত্র। মোবাইলের ওয়ালপেপারে ‘বিলিভ’ ইমোজি বসিয়ে মাঠে নেমে যা করলেন, তাতে ওভালের সকাল হয়ে উঠল ঐতিহাসিক।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ওভালে ৬ রানের নাটকীয় জয়ে ভারতের নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। মাত্র ৩৫ রান দূরে থাকা ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দেন ৩১ বছর বয়সী এই পেসার, তুলে নেন শেষ ৪ উইকেটের ৩টিই। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতির কথা জানান চেতেশ্বর পুজারাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
চতুর্থ দিনে হ্যারি ব্রুক যখন মাত্র ১৯ রানে ব্যাট করছিলেন, তখন প্রাসিদ্ধ কৃষ্ণর বলে ক্যাচ নিয়ে বাউন্ডারি লাইনের ধারে গিয়ে হোঁচট খান সিরাজ, আর বল চলে যায় মাটিতে। ওই ক্যাচ মিসের পর ব্রুক উপহার কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি করে ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেন।
“যখন আমার সঙ্গে ওই ‘হাদসা’ (দুর্ঘটনা) ঘটল, মনে হচ্ছিল ম্যাচ আমাদের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। ভেবেছিলাম, ওকে (ব্রুক) যদি আগেই পেতাম, ম্যাচের ছবিটা বদলে যেত। সারারাত ওই চিন্তাই ঘুরেছে মাথায়। সকালে উঠে নিজেকে বললাম, আজ আমি ম্যাচটাই পাল্টে দেব”, বলেন সিরাজ।
“গুগল করে ‘বিলিভ’ লেখা একটা ইমোজি খুঁজে ওয়ালপেপার বানিয়ে নিলাম। সেটাই সারাদিন আমাকে প্রেরণা দিয়েছে।”
পঞ্চম দিনের শুরুতেই সিরাজ তুলে নেন জেমি স্মিথের উইকেট, এরপর এলবিডব্লিউ করেন ওভারটনকে। শেষপর্যন্ত অ্যাটকিনসনকে দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে ম্যাচে ইতি টানেন এই ডানহাতি পেসার।
নিজের পরিকল্পনা নিয়ে সিরাজ বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল একই জায়গায় বল ফেলে যাওয়া, বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করিনি। জানতাম, বেশি চেষ্টা করলে চাপটা কমে যেতে পারে। তাই ঠিক রেখেছিলাম অফ-স্টাম্পের বাইরে নিয়মিত লাইন ও লেংথেই বল করব।’
২৩ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সিরাজ। পাঁচ ম্যাচের সবগুলোই গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে, প্রতিটি ম্যাচেই ভারত লড়েছে প্রাণপণ।
‘এই সিরিজে সবাই যেভাবে লড়েছে, তাতে পুরো দলকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে আমরা লড়াই করেছি। এই দলের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত’, বলেন সিরাজ।
চতুর্থ দিনে হতাশ সিরাজ, পঞ্চম দিনে আগুনে সিরাজ- এই রূপান্তরই ভারতকে এনে দিল ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়া একটি জয়। ‘বিলিভ’ শব্দটি হয়তো এখন থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটু বেশিই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন