ক্যানসার—যে শব্দ শুনলেই গা শিউরে ওঠে, সেই রোগের সঙ্গে একসময় লড়াই করেছেন ক্রিকেট দুনিয়ার একাধিক তারকা। মাঠে প্রতিপক্ষকে হারানো তাদের কাছে সহজ ছিল, কিন্তু জীবনের এই যুদ্ধে লড়াই ছিল আরও কঠিন। সম্প্রতি আবারও খবরের শিরোনামে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, যিনি জীবনে ষষ্ঠবারের মতো ত্বকের ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করালেন।
ইনস্টাগ্রামে নিজের অস্ত্রোপচারের ছবি শেয়ার করে ক্লার্ক সতর্কবার্তা দিয়েছেন ভক্তদের— ‘স্কিন ক্যানসার বাস্তব! বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে। নিয়মিত চেকআপ আর প্রতিরোধই বাঁচাতে পারে জীবন।’
যেসব ক্রিকেটার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়েছেন
মাইকেল ক্লার্ক – প্রথমবার ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার এই কিংবদন্তির ধরা পড়ে ত্বকের ক্যানসার। একাধিকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে, ২০২৩ সালে ক্যানসার অপসারণে ২৭টি সেলাই লেগেছিল। এখনো নিয়মিত পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
রিচি বেনো – কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার জীবনের শেষ দিকে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। কয়েক মাস পর, ২০১৫ সালের এপ্রিলে তিনি মারা যান।
যুবরাজ সিং – ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতকে শিরোপা এনে দেওয়া নায়ক। বিশ্বকাপের পরপরই জানা যায় তার ফুসফুসে রয়েছে বিরল টিউমার। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি শেষে ২০১২ সালে তিনি ক্রিকেটে দারুণভাবে ফেরেন। তার লড়াই আজও কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা।
জিওফ্রে বয়কট – ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ওপেনার, ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক। ২০০৩ সালে গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। ৩৫টি রেডিওথেরাপির পর তিনি আবার ফিরে আসেন ধারাভাষ্যে।
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার – জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি ও ইংল্যান্ডের সাবেক কোচ। ২০১০ সালে গালে স্কিন ক্যানসার ধরা পড়ে, দ্রুত অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং সচেতনতা প্রচারে যুক্ত হন।
গ্রায়েম পলক – দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং মহারথী। ২০১৩ সালে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অসুখের চিকিৎসায় আর্থিক সংকটে পড়লেও সাবেক ক্রিকেটারদের সহায়তায় কিছুটা স্বস্তি পান।
মার্টিন ক্রো – নিউজিল্যান্ডের মারকুই ব্যাটার। ২০১২ সালে লিম্ফোমায় আক্রান্ত হন। কিছুদিন সাড়া দিলেও ২০১৪ সালে ফের ক্যানসার ফিরে আসে। ২০১৬ সালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
স্যাম বিলিংস – ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটার। ২০২২ সালে চামড়ার ক্যানসার ধরা পড়ে, দ্রুত অস্ত্রোপচারে কেটে ফেলা হয়। পরে তিনি নিজে থেকে মানুষকে সতর্ক করতে শুরু করেন।
ক্রিকেট মাঠে ছক্কা-চারের ঝড় তোলা এই তারকারা প্রমাণ করেছেন—জীবনের আসল জয় হলো অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হার না মানা। তাদের গল্প শুধু ক্রিকেট ভক্ত নয়, যে কারও জন্য সাহস আর আশার প্রতীক।
মন্তব্য করুন