ট্রিপলেট। শব্দটা যেমন অপরিচিত, এর মানেটাও বেশ অদ্ভুত। একসাথে তিনটা বাচ্চা জন্ম নিলে বলা হয় ট্রিপলেট বা ত্রয়ী। ভাবছেন খেলার পাতায় এসব আলোচনা কেন! দেরি না করে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক এবার। এশিয়া কাপের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ দল সিরিজ খেলছে নেদারল্যান্ডস। যে দলটির হয়ে একবার তিন জমজ ভাইয়ের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। যা ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন জমজ ভাই মাঠে নেমে বিরল রেকর্ডে নাম লেখান। সাকিব-আসাদ-জুলফিকার তিন ভাই খেলেছেন নেদারল্যান্ডস দলে। পিতৃভূমি পাকিস্তানের হয়ে খেলার স্বপ্নও লালন করে সিলেটে ডাচ শিবিরে থাকা আসা জুলফিকার সিকান্দার।
শেখার তাড়নায় কথা বলতে চান বাংলাদেশের সাকিবের সঙ্গে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না আপাতত। সাকিব যে বাংলাদেশেই নেই!
বেন, টম আর স্যাম কারানের একসাথে ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলার খবর আলোড়ন তুলেছিল বিশ্বে। জমজদের মধ্যে স্টিভ আর মার্ক ওয়াহ জগত বিখ্যাত। তবে জুলফিকার ব্রাদার্স তো সব ছাপিয়ে গেলেন। এই অনুভূতিটা কেমন, এম প্রশ্নের জবাবে কালবেলাকে বললেন, ‘অবশ্যই আনন্দের এবং খুবই স্পেশাল। প্রসঙ্গক্রমেই আসল, তিন ভাইয়ের মধ্যে লড়াইটা কেমন! জবাবে জুলফিকার জানালেন, এটা খুবই হেলদি একটা কম্পিটিশন। যেই ভালো করুক তারা সবাই খুশি থাকে, কেননা তারা একই দলের হয়েই খেলে।
পিতা ছিলেন পাকিস্তান, তাও আবার পেশাদার ক্রিকেটার। কখনো পাকিস্তানে গিয়েছেন কিনা প্রশ্নে উত্তর দিলেন, একবার গিয়েছেন, যখন বয়স ছিল সবে ৮-৯ বছর। তবে পাকিস্তানে গিয়ে বেশ ভালো লেগেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় পাল্টা প্রশ্ন ছোড়া হয় তার দিকে, পাকিস্তানে হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেন কিনা! জুলফিকার বললেন, অবশ্যই। তবে তার জন্য তো ক্লাব লেভেল থেকেই ভালো করতে হবে অনেক। তবে যেহেতু আমার জন্ম নেদারল্যান্ডসে, তাই ডাচদের হয়ে মাঠ মাতানোই তার প্রথম কাজ।
জুলফিকার এই সিরিজে সুযোগ পেয়েছেন তার ভাই সাকিবের বদলে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ক্রিকেটে ফিরলেন, প্রসঙ্গক্রমে আসল, তিনি সাকিবকে চেনেন কিনা? বেশ উৎসাহ নিয়েই বললেন, অবশ্যই চিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সে।
এই সিরিজে তাকে মিস করবেন? এক নিঃশ্বাসে জুলফিকারের উত্তর, ‘তিনি (সাকিব আল হাসান) থাকলে তার থেকে উপদেশ নিতে পারতাম। তার অনেক অভিজ্ঞতা আছে, সেখান থেকে টিপস নিতে পারতাম। তার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হতো।’
ইউরোপীয়ান ক্রিকেটে সবশেষ চার মৌসুমে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন জুলফিকার। ২৪৬ স্ট্রাইক রেট আর দশ ফিফটিতে রান আছে সাড়ে পনেরোশো এর উপরে। তাও আবার মিডল বা লোয়ার অর্ডারে নেমে। মিডিয়ায় পেসটাও ঠিকঠাক করেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেন ছাপ রাখতে পারেন না! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর ইউরোপীয়ান লিগের মধ্যে তফাৎটা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার মনে হয় গেমের স্পিড আর এনালাইসিসটাই মূল তফাৎটা গড়ে দেয়। তবে ইউরোপীয় ক্রিকেটও খুব দ্রুত বেড়ে উঠছে।’
অনেক সাউথ এশিয়ান শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করছেন নেদারল্যান্ডসে। তারা ডাচ ক্রিকেটের অংশ হতে পারবে কিনা? সেখানে ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা কেমন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সুযোগ আছে। তবে দিনদিন কম্পিটিশন আরও বাড়ছে। ক্লাব পর্যায়ে নিজেদের প্রমান করতে পারলে, কঠোর পরিশ্রম করলে অবশ্যই পারবে।
ভাই সাকিবের বদলে জায়গা পেলেন, আবার শীর্ষ অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজার সঙ্গে মেলে নামের প্রথম অংশ। দুই কিংবদন্তির সাথে মিল থাকা জুলফিকার কি পারবেন নিজেকেও বিশ্ব ক্রিকেটে বড় নাম হয় উঠতে? উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা থাকল!
মন্তব্য করুন