প্রথম দুই ম্যাচের ব্যাটিং ভরাডুবির পর যেন নতুন করে জেগে উঠল বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট এবার আর আগের মতো ঘূর্ণিমুখী ছিল না—বরং ব্যাটারদের স্বপ্নের মতোই আচরণ করেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান উপহার দিলেন রেকর্ড গড়া এক সূচনা। তাদের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথম ইনিংসে করেছে ২৯৬ রান, হারিয়েছে ৮ উইকেট।
দিনের শুরুতেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন সাইফ। আকিল হোসেনের প্রথম ওভারেই পরপর দুটি চার মেরে জানান দেন, আজ ব্যাটে কথা বলবেন তিনিই। অন্য প্রান্তে সৌম্যও ছিলেন সমান তালে। দুজনের মেলবন্ধনে পাওয়ারপ্লেতে আসে ৭৪ রান—কোনো উইকেট না হারিয়ে। এরপর তারা খুলে খেললেন আরও স্বচ্ছন্দে। ২৫তম ওভার পর্যন্ত দুজন মিলে গড়লেন ১৭৬ রানের জুটি, যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি।
যদিও একবার আউটের হাত থেকে বাঁচতে রিভিউ নিতে হয়েছিল সাইফকে, তবু সেটি ছাড়াও তাদের ব্যাটিংয়ে ছিল দারুণ আত্মবিশ্বাস। অবশেষে সাইফ হাসান ৭২ বলে ক্যারিয়ারসেরা ৮০ রানে বিদায় নেন—লং-অন বাউন্ডারিতে মিসটাইমড শটে ধরা পড়েন গ্রিভসের হাতে। তার বিদায়ের পরপরই সৌম্যও ফিরে যান ৮৬ বলে ৯১ রানে, যেখানে ছিল ৭টি চার ও ৪টি ছয়।
এরপর হঠাৎই গতি হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। তৌহিদ হৃদয় (২৮) ও শান্ত (৪৪) চেষ্টা করলেও রান তোলার হার কমে যায়। মধ্য ও শেষ ওভারে উইন্ডিজ স্পিনাররা চাপ বাড়িয়ে দেন। তবে ক্যাচ মিস আর স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করায় হতাশ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডিং ইউনিট। অধিনায়ক শাই হোপের এক স্টাম্পিং মিস ছিল বিশেষভাবে ব্যয়বহুল।
তবু শেষ দিকে আকিল হোসেনের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ফেরায় গতি। ৪৬তম ওভারে তিনি একাই নেন তিনটি উইকেট—শেষ পর্যন্ত তার বোলিং ফিগার ১০ ওভারে ৪১ রানে ৪ উইকেট। অথানাজে নিয়েছেন ২টি উইকেট, চেজ ১টি।
শেষদিকে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে দেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ (১৭ বলে ১৭) ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান (৮ বলে ১৬*), তাদের ছোট ইনিংসেই দল পেরিয়ে যায় ২৯০ রানের ঘর। ইনিংস শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ১৪টি ছক্কা—যা দলের ওয়ানডে ইতিহাসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
তবে শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৬৫ রান তোলায় বাংলাদেশের ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ৩০০ পেরোয়নি। তারপরও ব্যাটারদের জ্বলে ওঠা, বিশেষ করে টপ অর্ডারের এমন সপ্রতিভ সূচনা, নিঃসন্দেহে দেবে আস্থা।
এখন দেখার পালা, আলো-আঁধারি মিরপুরে এই রান রক্ষা করতে পারে কি না মেহেদি হাসান মিরাজের দল—কারণ প্রথম দুই ম্যাচের ভুলভ্রান্তির পর বোলারদের কাছেই এখন নির্ভর করছে সিরিজের ভাগ্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৯৬/৮ (৫০ ওভারে) — সৌম্য ৯১, সাইফ ৮০, শান্ত ৪৪; আকিল হোসেন ৪/৪১, অথানাজে ২/৩৭।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য: ২৯৭ রান।
মন্তব্য করুন