এশিয়া কাপে গতবারের চ্যাম্পিয়ন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবার তাই আলোচনায় ছিল লঙ্কানরা। কিন্তু চোট জর্জর দলে ছিল না তারকা খেলোয়াড়ের আধিক্য। ভরসা ছিল তারুণ্যই।
তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে দুর্দান্ত টিম স্পিরিটে লঙ্কানরা অনেক কিছুই ভুল প্রমাণ করেছিল। বিশেষ করে ফাইনালে ওঠে আসার পথটা ছিল তাদের বেশ রোমাঞ্চকর ও অপ্রতিরোধ্য।
গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচেই জিতেছে তারা। হারিয়েছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে। দাপটে সুপার ফোরে যাওয়া শানাকা শিবির এই পর্বে ম্যাচ হেরেছে মাত্র একটিতে। সেটাও ভারতের সঙ্গে জোর লড়াই করে। বাকি দুই ম্যাচেও ঘাম ঝড়াতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়ের পর অঘোষিত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে হারায় শক্তিশালী পাকিস্তানকে।
ভারতের সঙ্গে ফাইনালটা হবে শ্রীলঙ্কার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এমন ব্যাপারটি ছিল বেশ অনুমিত। কিন্তু কলম্বোয় আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখে হতাশ লঙ্কান ভক্তরা। এক মোহাম্মদ সিরাজের পেস তোপেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে দলটি।
প্রথম ওভারেই বুমরাহর আঘাত, বিদায় নেন লঙ্কান ওপেনার কুশল পেরেরা। এরপর থেকেই লঙ্কান শিবিরকে চেপে ধরেন সিরাজ। ৮ রানে চার উইকেট হারানো লঙ্কানদের হয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি কেউ। ১২ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন। যা শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে শুরু।
কুশল মেন্ডিজ একাই লড়াই করার চেষ্টা করেছেন। ৩৪ বলে ১৭ রানে তিনিও সিরাজের শিকার। লঙ্কানদের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ৩৩ রান। ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর ৩৫, যে লজ্জার রেকর্ড জিম্বাবুয়ের, প্রতিপক্ষ ছিল আবার শ্রীলঙ্কা।
সেই লজ্জার রেকর্ড অবশ্য পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে শ্রীলঙ্কা। তখন ভয় হচ্ছিল নিজেদের লজ্জার সর্বনিম্ন ওয়ানডে স্কোরে আবার নাম না লেখায় দলটি। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার সর্বনিম্ন রান ৪৩, ২০১২ সালে পার্লে এই লজ্জা লঙ্কানদের দিয়েছিল সাউথ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত এই লজ্জার রেকর্ড অবশ্য এড়াতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এশিয়া কাপের ফাইনালে এমন ব্যাটিং লজ্জা আগে পায়নি কখনো দলটি।
শেষ অবধি ৫০ রানে অল আউট শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার প্রথম আট ব্যাটারের মধ্যে একমাত্র কুশল মেন্ডিজ ছুঁতে পেরেছেন দুই অঙ্কের রান। বাকিরা ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে। রানের খাতাই খুলতে পারেননি কুশল পেরেরা, সামারাবিক্রমা, চারিথ আসালাঙ্কা ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ১৩ রানে অপরাজিত দুশান হেমন্ত। সিরাজের ছয় উইকেটের পর লঙ্কান শিবিরে হানা দিয়ে তিন উইকেট বগলদাবা করেন হার্দিক পান্ডিয়া।
অথচ এশিয়া কাপের ফাইনালটা হবে জম্পেশ, সবার প্রত্যাশা ছিল তেমনিই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ে সেই রোমাঞ্চ উধাও। অথচ এই এশিয়া কাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সর্বোচ্চ সাতবার চ্যাম্পিয়ন ভারত।
এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ মোকাবিলা ২০১০ সালে ডাম্বুলায়। সেই ফাইনালে ৮১ রানের জয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। দীনেশ কার্তিকের ৬৬ রানের সৌজন্যে প্রথমে ব্যাট করে ২৬৮ তুলেছিল ভারত। জবাবে আশিস নেহরার বোলিং দাপটে ১৮৭ রানে অল আউট হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কলম্বোয় ঘরের মাঠে ১৩ বছর পর সেই হারের শোধ নেওয়ার সুযোগ ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে সব ধূলিস্যাত হওয়ার পথে। কারণ রেকর্ড অষ্টমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে ভারতের দরকার মাত্র ৫১ রান।
মন্তব্য করুন