ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আজ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মাঠে নামছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রতিপক্ষ ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা সাকিব বাহিনীকে ধর্মশালায় শেষ ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের কাছে বিশাল পরাজয়ে মাটিতে নামিয়ে আনে। ওই ম্যাচের দুইদিন না পেরোতেই বাংলাদেশের সামনে আজ আরও একটি কঠিন পরীক্ষা।
চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে ফরম্যাটে ৪১ ম্যাচের মুখোমুখি লড়াইয়ে তারা ৩০টিতে জিতে এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বকাপেও পাঁচ লড়াইয়ে পাঁচটি জিতেছে তারা। চলতি আসরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে ও নেদারল্যান্ডসকে ৯৯ রানে হারিয়ে কিউইরা এখন উড়ছে। যদিও আজ বাংলাদেশকে খাটো করে দেখবে না কেন উইলিয়ামসনের দল।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো করেই পরিচয় আছে কেন উইলিয়ামসনের । বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতাও খুব কম নয় নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কের। ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে ৪-০ ও ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারের তেতো অভিজ্ঞতা আছে কিউইদের। যদিও বর্তমান ফর্ম আর বিশ্বকাপের মঞ্চ বলে আজ তারাই এগিয়ে থাকবে। এর পরও বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে দলকে সতর্ক করলেন উইলিয়ামসন। চোট কাটিয়ে পুরো ফিট হয়ে এই বিশ্বকাপে প্রথম তাকে মাঠে দেখা যাবে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উইলিয়ামসন বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই উপমহাদেশের এসব কন্ডিশনের সঙ্গে তারা অনেক বেশি পরিচিত এবং তাদের দলে ম্যাচ জেতানোর মতো অনেক খেলোয়াড় আছে। আমি সবসময় একটা কথাই বলি, এ রকম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট এলে দেখা যায়, প্রতি বছর এমন অনেক দল থাকে যারা কন্ডিশনভেদে ম্যাচ জেতানোর মতো খেলোয়াড়দের সহায়তায় একে অপরকে হারাতে পারে।’
উইলিয়ামসন প্রতিপক্ষ হিসেবেও সাকিব আল হাসানের দলকে সম্মান ও সমীহ করলেও বাস্তবতা হলো বিশ্বকাপ ও এর বাইরের লড়াইয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। বৈশ্বিক এ টুর্নামেন্টে পাঁচবারের দেখায় প্রতিবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কিউইরা। ১৯৯৯ সালে প্রথম দেখায় কিউইদের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এরপর ২০০৩ সালে ৭ উইকেটে, ২০০৭ সালে ৯, ২০১১ সালে ৩ ও ২০১৯ সালে ২ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ২-০-তে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ওই সফরে পূর্ণ শক্তির দল পাঠায়নি কিউইরা। বাংলাদেশও বিশ্রাম দেয় সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজসহ শীর্ষ ক্রিকেটারদের।
তবে কৃতী খেলোয়াড় উইলিয়ামসন জানেন, নিজেদের সেরা দিনে টাইগাররা যে কোনো বড় দলকে মাটিতে নামাতে পারে। বাংলাদেশে টানা সাত ম্যাচ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই ভুলে যাননি তিনি। কিউই দলনায়ক তাই মনে করেন, নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে তার দলকে। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ প্রতিটি দল কিছুটা ভিন্ন চ্যালেঞ্জ জানায়। আমি মনে করি, দল হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি খেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর সঙ্গে নিবদ্ধ থাকার চেষ্টা করেন এবং সেগুলোর প্রতি নিবেদিত থাকতে চান। কারণ এটি লম্বা টুর্নামেন্ট। প্রতিটি ম্যাচই কঠিন। তাই নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করাটাই মূল ব্যাপার।’
অবশ্য উইলিয়ামসন ফিরলেও বাংলাদেশ ম্যাচেও কিউইরা পাচ্ছে না সাউদিকে।
টানা তিন বিশ্বকাপে (২০১৫, ২০১৯ ও ২০২৩) প্রথম তিন ম্যাচেই টানা জয়ের হাতছানি কিউইদের সামনে। ১৯৯২ ও ২০০৭ আসরেও এ কীর্তি আছে তাদের। আত্মবিশ্বাসী দলটির সামনে আজ অগ্নিপরীক্ষায় পড়বে বাংলাদেশ।
চেন্নাইয়ের মাঠ স্পিনবান্ধব। ৮ অক্টোবর এ মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কর্তৃত্ব করেন ভারতের স্পিনত্রয়ী রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও রবিচন্দ্র অশ্বিন। ১০৪ রান দিয়ে তারা তুলে নেন অজিদের ৬ উইকেট। ওই ম্যাচের মতো আজও উইকেট থেকে স্পিনাররা সুবিধা পেলে লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
আইপিএলে খেলা সাকিব ও মুস্তাফিজ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে চেন্নাই একেবারেই অচেনা ভেন্যু। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ এ মাঠে একবারই খেলেছে। ১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের সেই ম্যাচে কেনিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
ব্যাট কিংবা বল—নতুন বলে বাংলাদেশের দুর্বলতা কারো অজানা নয়। এ জায়গাই দলের বড় উদ্বেগের জায়গা। নিউজিল্যান্ড ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশের সহঅধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, ‘নতুন বল মোকাবেলা করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। আমরা ভালো সূচনা এনে দিতে পারলে তা অবশ্যই দলকে সাহায্য করে। তবে আমি মনে করি, দ্রুত দু-তিনটি উইকেট পড়ে গেলেও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন পরিস্থিতি থেকেও বড় স্কোর গড়ার কথা ভাবতে হবে আমাদের।’
বাংলাদেশের ওপেনারদের ওপর ভরসা রাখতে বললেন শান্ত। তার কথায়, ‘আমার মনে হয় যে এখানে টপ অর্ডারে যারাই আছে, তারা খুব ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। এক-দুইটা ভালো ইনিংস ওই ব্যাটসম্যানকে ভালো আত্মবিশ্বাস এনে দেবে। সবাই দলের জন্য চেষ্টা করছে। আশা করছি, সামনের ম্যাচ থেকে টপ অর্ডারেও ভালো স্কোর আসবে।’
আজ বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তন আসতে পারে। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম আফগানিস্তান ম্যাচে ৫ ও ইংল্যান্ড ম্যাচে ১ রান করেন। এরপরও তাকে একাদশে রাখতে সাহসী হতে হবে ম্যানেজমেন্টকে। তানজিদ বাদ পড়লে ওপেন করতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর নিউজিল্যান্ডের বামহাতি ব্যাটারদের কথা মাথায় রেখে একাদশে জায়গা ধরে রাখতে পারেন স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানও। চেন্নাইয়ের স্পিন সহায়ক উইকেটের কথা ভেবে মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় নাসুম আহমেদকে সুযোগ করে দেয়া হতে পারে।
মন্তব্য করুন