হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেই এমন ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রামের একটি হোটেলে এ সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
তামিম বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আমার মনে হয় না বলার দরকার আছে। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে এটাই ঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিব।’
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় একটা কথা বলেছি, আমি খেলেছি... (কান্না)। আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য (আবার কান্না)। কাজেই আমি নিশ্চিত না আমি তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি পুরো ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আরও অনেকেই আছে যাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন আকবর খান, ওনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তাকে ধন্যবাদ দেই।’
বাংলাদেশের এ অধিনায়ক বলেন, ‘এই এম এ আজিজে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে... (আবার আবেগে ভেঙে পড়েন। যার কাছে ছোটবেলা থেকে আমি অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ দেই।’
ক্রিকেটার তামিম বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে যত খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যাদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৩, ১৭ বা নাইনটিন, এইটেন, প্রিমিয়ার লিগ। জাতীয় দল যাদের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দেই। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা আমার সতীর্থ ছিলেন তাদের সবাইকে’
তিনি বলেন, ‘আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। আপনারা দেখছেন আমি একদম কথা বলার অবস্থায় নেই। কিন্তু আমি আশা করি আপনারা পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। (আবার কান্না)। এটা কথা বলার মতো সহজ পরিস্থিতি না। আমি এত বছর ধরে খেলেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর সহজ না। এত অল্প সময়ের নোটিশে আপনাদের ডাকা হইছে। আমি মিডিয়ার সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।’
তামিম বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড আমাকে সুযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক হয়ে লম্বা সময় প্রতিনিধিত্ব করার। আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। একটা জিনিস বলব আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি, আমি সেরাটা দিতে চেয়েছি (আবার গলা ধরে এলো)। আমি হয়ত নট গুড এনাফ, অথবা গুড এনাফ। কিন্তু যখনই মাঠে ছিলাম আমি শতভাগ দিতে চেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অনুরোধ যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে তাদের কথা ভালো লিখবেন, খারাপও লিখবেন। ক্রিকেটেই যেন থাকেন। সীমার বাইরে যাবেন না। ভালো খেললে ভালো লিখবেন, খারাপ খেললে সমালোচনা করবেন। আপনারা সবাই বুঝতে পারেন, মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম হয়ে যায়। যারা এখন ক্রিকেট খেলছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর বিশ্বকাপের জন্য। আমি আশা করি আপনারা দলের সদস্যের মতো থাকবেন, সমর্থন দেবেন।’
তামিম আরও বলেন, ‘আমি আবারও বলি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য। কতটা করতে পেরেছি জানি না। হয়ত আরও অনেককে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল, যদি নাম ভুলে যায় ক্ষমা চাই। আমার মা, তাকে ভুলব কী করে। আমার ভাই, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান। আমার এই ভ্রমণে তারা অনেক ভুগেছে, আবার আনন্দের সময়ও ছিল। আমি তাদের ধন্যবাদ দেই। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নাই। একটাই বলব আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুঁতাগুঁতি কইরেন না। আমি সব সময় বলেছি দল সব সময় যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে বড়। দুই ম্যাচ আছে এই সিরিজের আশা করি দল জিতবে। সবাইকে ধন্যবাদ।’
মন্তব্য করুন