ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা গাজায় চলমান যুদ্ধকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ ও ‘ভীতিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট গ্রহণকালে দেওয়া আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন, শিশুদের ওপর চালানো নৃশংসতা তার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে তুলেছে।
গত ২০ মাস ধরে গাজা উপত্যকায় চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ, যার সূচনা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন এক হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার ঘটনার মাধ্যমে। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪,৮৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গার্দিওলা তার বক্তৃতায় বলেন, ‘গাজার দৃশ্যগুলো এতটাই কষ্টদায়ক যে আমার পুরো শরীর ব্যথায় মোচড়ায়। এটি কোনো আদর্শিক মতবিরোধ নয়, এটি মানুষের জীবন ও প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতির প্রশ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন যখন আমি আমার সন্তানদের—মারিয়া, মারিয়ুস ও ভ্যালেন্তিনার মুখ দেখি, তখন গাজার শিশুদের চিত্র চোখে ভেসে ওঠে। আমি শঙ্কিত হই—কারণ এই চার-পাঁচ বছরের শিশুরা আজ গাজায় মরছে, কাল হয়তো আমাদের আশেপাশের শিশুরা।’
গার্দিওলার এই বক্তব্যের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পেপ গার্দিওলা বরাবরই তার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে খোলামেলা। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে তিনি বহুবার প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। ২০১৮ সালে এ বিষয়ে প্রতীকী বার্তা হিসেবে হলুদ ফিতা পরার কারণে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাকে ২০,০০০ পাউন্ড জরিমানা করেছিল।
তার বক্তৃতায় গার্দিওলা একটি গল্প তুলে ধরেন— ‘একটি জঙ্গলে আগুন লাগে। সব প্রাণী আতঙ্কে। কিন্তু একটি ছোট পাখি তার ঠোঁটে সামান্য পানি নিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। একটি সাপ তাকে বলে, ‘তুমি পারবে না আগুন নেভাতে।’ পাখি জবাব দেয়, ‘জানি, কিন্তু আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।’
এই গল্পের মাধ্যমে গার্দিওলা বোঝাতে চেয়েছেন, ‘আমরা হয়তো বড় কিছু করতে পারব না, কিন্তু নীরবতা কখনোই সমাধান নয়। আমাদের উপস্থিতি, আমাদের কণ্ঠই হতে পারে পরিবর্তনের সূচনা।’
গার্দিওলা শুধু সিটির হয়ে ১৮টি ট্রফি জেতেননি, বরং তার পরিবার পরিচালিত "Guardiola Sala Foundation" সমাজের অবহেলিতদের জন্যও কাজ করে চলেছে। এই মানবিক অবদানগুলোর জন্যই তাকে দেওয়া হয়েছে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।
গার্দিওলার মতো আরও অনেক ফুটবলার ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। মিশরের তারকা ফুটবলার মোহাম্মদ সালাহ যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, ‘নিরীহ প্রাণগুলো রক্ষায় একজোট হও’। নেদারল্যান্ডসের উইঙ্গার আনোয়ার এল ঘাজির একটি প্রো-প্যালেস্টাইন পোস্টের কারণে তার ক্লাব মেইনজ তার চুক্তি বাতিল করেছিল। পরে তিনি তার ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে গাজার শিশুদের জন্য প্রকল্পে সহায়তা দেন।
মন্তব্য করুন