

শীতকাল এলেই রান্নাঘরে ফুলকপির আধিপত্য বাড়ে। ফুলকপির পরোটা, আলু-ফুলকপির তরকারি কিংবা নানা ধরনের ভাজি— সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং সহজে রান্না করা যায় বলেই অনেকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে ফুলকপি।
তবে অনেকেই জানেন না, এই উপকারী সবজিটি অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ফুলকপির একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
ফুলকপি ও হজমের সমস্যা
ফুলকপি খাওয়ার পর অনেকেরই পেট ভারী লাগা, ফাঁপা ভাব বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে ফুলকপির গঠন ও এতে থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপাদান।
ফুলকপি হলো সরিষা গোত্রের একটি পরিবর্তিত রূপ। একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ব্রকলি, বাঁধাকপি ও ব্রাসেলস স্প্রাউটস। এগুলোকে একত্রে বলা হয় ক্রুসিফেরাস সবজি। এই সবজিগুলোতে রয়েছে ফলেট, ভিটামিন কে, ফাইবারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে বা কাঁচা অবস্থায় খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কেন ফুলকপি পেট ফাঁপায়?
ক্রুসিফেরাস সবজির অন্যতম সমস্যা হলো, এগুলো তুলনামূলকভাবে হজম করা কঠিন, বিশেষ করে কাঁচা অবস্থায় খেলে। ফলে অনেক সময় পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
ফুলকপিতে রয়েছে ‘রাফিনোজ’ নামের এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। এটি প্রাকৃতিকভাবে কিছু উদ্ভিদে পাওয়া যায়। তবে মানবদেহে এমন কোনো কার্যকর এনজাইম নেই, যা রাফিনোজ ভাঙতে পারে। ফলে ফুলকপি খাওয়ার পর এই উপাদানটি হজম না হয়ে সরাসরি পরিপাকতন্ত্রের শেষ অংশ বৃহদান্ত্রে পৌঁছে যায়। সেখানে অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া রাফিনোজকে ফারমেন্ট করে, যার ফলে তৈরি হয় গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা। শুধু তাই নয়, ফুলকপিতে থাকা সালফারযুক্ত যৌগ গ্লুকোসিনোলেটস ভেঙে গিয়ে হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি করে, যা ফুলকপি খাওয়ার পর অস্বস্তিকর গন্ধযুক্ত গ্যাসের কারণ হয়।
তাহলে কি ফুলকপি খাওয়া বন্ধ করা উচিত
একদমই না, বরং সঠিকভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে খেলে ফুলকপি অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। গবেষণায় দেখা গেছে, টাটকা ফুলকপিতে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কাঁচা ফুলকপিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি হলেও রান্না করলে এতে থাকা ইন্ডোল নামের উপকারী উপাদান বেড়ে যায়।
তবে যাদের হজমের সমস্যা বেশি, তাদের জন্য কাঁচা ফুলকপি না খেয়ে হালকা সেদ্ধ বা রান্না করা ফুলকপি খাওয়াই ভালো। পাশাপাশি অতিরিক্ত সিদ্ধ না করে ভাপ দিয়ে বা অল্প তেলে রান্না করলে পুষ্টিগুণও বজায় থাকে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন