বর্ষাকাল মানেই টিনের চালে টুপটাপ বৃষ্টির সুর, চারপাশে সবুজের সমারোহ, আর একটু আরামদায়ক ঠান্ডা আবহাওয়া। কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশের মাঝেও শিশুর যত্ন নিতে হয় একটু বাড়তি সচেতনতা নিয়ে। কারণ, এই সময়টা বিভিন্ন রোগবালাই, ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি ও চর্মরোগের মৌসুম। তাই চলুন জেনে নিই, বর্ষাকালে আপনার শিশুর যত্নে কী করবেন।
শিশুকে শুকনো রাখুন
বৃষ্টির পানিতে বা জমে থাকা পানিতে শিশুকে হাঁটতে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই পানিতে জীবাণু থাকে, যা ত্বকে ইনফেকশন বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। শিশু বাইরে বের হলে এবং ভিজে গেলে দ্রুত শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে শুকনো কাপড় পরিয়ে দিন।
সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন
এই সময় শিশুকে হালকা ও আরামদায়ক কিন্তু পুরো শরীর ঢাকে এমন কাপড় পরান। সুতির পোশাক ভালো, কারণ তা ঘাম শুষে এবং ত্বকে আরাম দেয়। তাপমাত্রা বেশি কমে গেলে পুরো হাতা ও পায়ের জামা পরান, যাতে শিশুর ঠান্ডা না লাগে।
পায়ের যত্ন নিন
বর্ষায় শিশুর পা সবসময় শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ভেজা মোজা বা জুতা থেকে ছত্রাকজনিত সমস্যা হতে পারে, তাই সাবধান থাকুন। বাইরে থেকে এলে পা ধুয়ে ভালোভাবে মুছে পরিষ্কার শুকনো জুতা-মোজা পরান। প্রয়োজনে ছত্রাকজনিত সমস্যা প্রতিরোধে অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার প্রয়োগ করতে পারেন।
খাবারে সতর্কতা
বর্ষাকালে পচা-বাসি খাবার থেকে নিজেও দূরে থাকুন, আপনার ছোট শিশুকেও দূরে রাখুন। শিশুকে সবসময় বাসায় তৈরি গরম খাবার দিন। কাঁচা ফল বা সালাদ খাওয়ানোর আগে তা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। পানির ব্যাপারে খুব সচেতন থাকুন—ফুটানো পানি খাওয়ান। পানি উষ্ণ করে (ফুটিয়ে) শিশুকে খাওয়ালে তা ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
মশা থেকে সুরক্ষা
বৃষ্টির সময়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়ায় মশার মাধ্যমে। তাই মশার কামড় থেকে শিশুকে রক্ষা করুন। মশারি ব্যবহার করুন, শিশুদের উপযোগী মশা নিরোধক লোশন ব্যবহার করতে পারেন এবং সন্ধ্যার পর জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন।
ত্বকের যত্ন
বর্ষায় শিশুর কোমল ত্বকে র্যাশ বা ফুসকুড়ি হতে পারে। শিশুর শরীর প্রতিদিন পরিষ্কার করে দিন। অতিরিক্ত ঘাম বা ভেজাভাব থেকে শরীর শুকনো রাখুন। প্রয়োজনে বেবি পাউডার বা শিশুদের জন্য উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। দরকার হলে অ্যান্টিসেপটিক সাবান দিয়ে গোসল করান এবং শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে শুকনো পোশাক পরান।
ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন
ঘর যেন স্যাঁতসেঁতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন। ঘরের জানালা দিনে কিছু সময় খুলে দিন যাতে আলো ও বাতাস ঢুকতে পারে। কার্পেট বা মোজা ব্যবহার কমান, যাতে ঘরে ধুলাবালি জমে না।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভয় পাবেন না
শিশু অসুস্থ বোধ করলে ঘরোয়া টোটকা না করে দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সর্দি-কাশি, জ্বর বা পেট খারাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে অবহেলা করা ঠিক নয়। এছাড়া গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির মৌসুমে ফ্লু, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস‑এসহ সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন সময়মতো নিন শিশুকে।
ডায়াপার বা মানি-ফ্রি সময় দিন
দীর্ঘক্ষণ আপনার শিশুকে ডায়াপার না পরিয়ে রেখে মাঝে মধ্যে শিশুকে ফ্রি রাখুন। এতে চর্মরোগ কম হয়।
বর্ষাকালে শিশুর যত্ন একটু বেশি মনোযোগ চায়। আপনি যদি সচেতন থাকেন, তবে এই বৃষ্টি উপভোগ করা আর শিশুর সুস্থতা রক্ষা—দুটোই সম্ভব। সুতরাং, বৃষ্টির দিনে একটু যত্ন নিন, আর বাকি সময়টা শিশুর সঙ্গে উপভোগ করুন মেঘলা দিনের আনন্দ।
মন্তব্য করুন