কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:১১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নারীবাদী চিন্তা একযোগে বিকশিত হয়েছে’  

ইলোরা শেহাবুদ্দীন রচিত ‘সিস্টার ইন দ্য মিরোর: অ্যা হিস্ট্রি অব মুসলিম উইমেন অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল পলিটিকস অব ফেমিনিজম’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে আলোকচকরা। ছবি: কালবেলা
ইলোরা শেহাবুদ্দীন রচিত ‘সিস্টার ইন দ্য মিরোর: অ্যা হিস্ট্রি অব মুসলিম উইমেন অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল পলিটিকস অব ফেমিনিজম’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে আলোকচকরা। ছবি: কালবেলা

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নারীবাদী চিন্তা একযোগে বিকশিত হয়েছে এবং অপরকে প্রভাবিত করেছে। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) প্রকাশিত ইলোরা শেহাবুদ্দীন রচিত ‘সিস্টার ইন দ্য মিরোর: অ্যা হিস্ট্রি অব মুসলিম উইমেন অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল পলিটিকস অব ফেমিনিজম’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন আলোচকেরা।

শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকাল ৪টায় ইউপিএলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানে বইটির লেখক ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার জেন্ডার অ্যান্ড উইমেন স্টাডিজ অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজের অধ্যাপক ড. ইলোরা শেহাবুদ্দীন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর পর আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন হয়। এরপর বেশি বেশি করে বলা হচ্ছিল মুসলিম নারীরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হচ্ছে। একই সময় বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে এর সমর্থনে বইও পাওয়া যেতে থাকে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে মার্কিন আগ্রাসনের বৈধতা দিতে দেখা গেছে সেসব বইয়ে।

তিনি বলেন, আমি ঐতিহাসিকভাবে এই বিষয়ে জানতে ও লিখতে আগ্রহী হয়ে উঠি। একইসঙ্গে আমি দেখার চেষ্টা করেছি পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই প্রাচ্যের নারীদের নির্যাতিত ও পিছিয়ে থাকা, এভাবেই দেখে এসেছে, না কি ধীরে ধীরে তাদের দেখা ভঙ্গি বদলেছে। আমি খুঁজতে থাকলাম মুসলিম নারীদের প্রতি পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বদলেছে, একইসঙ্গে পশ্চিমের নারী-পুরুষের প্রতি মুসলিমদের ধারণা কীভাবে বদলেছে। একই সঙ্গে পশ্চিমে মুসলিম বিশ্ব বলতে আরব দেশগুলো, ইরান ইরাক আফগানিস্তান, তুরস্ক মরেক্কোকে বোঝে, কিন্তু আমি দক্ষিণ এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি।

ইলোরা শেহাবুদ্দীন বলেন, এই বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছি কীভাবে অ্যাংলো-আমেরিকান পশ্চিমের নারীবাদী আন্দোলন এবং মুসলিম দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী আন্দোলন একযোগে বিকাশলাভ করেছে এবং একে অপরকে সমৃদ্ধ করছে। বইয়ের শিরোনামও তেমনই রাখা হয়েছে, যেখানে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ধারণা করা যায়, তেমনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নারী আন্দোলনের ধারা পরস্পরের কাছে আয়নার মতো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, এই বইটি একটি ইতিহাস রচনা করেছে। ইতিহাসের পাঠক ও শিক্ষক হিসেবে দেখেছি লেখক গুরুত্বপূর্ণ এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, চিঠি, কথপোকথন থেকে ভিন্ন ভিন্ন অপ্রচলিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়ে বৃহৎ ক্যানভাসে ইতিহাসের নতুন পাঠ তুলে ধরেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, এই বইটি পড়ে বাংলাদেশকে বোঝার জন্য এবং গ্লোবাল পলিটিকস অফ ফেমিনিজমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা, আমরা বনাম তোমরা-এর আধিপত্যশীল ধারণার বিকাশ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০০১ সালের ৯/১১ এর পর পশ্চিমা দৃষ্টিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও ফ্যানাটিক মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে বিদ্যমান বহুত্ববাদের ধারণা আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে হারিয়ে যায়। সে দিক থেকে এই বইটি একরকম সত্য ‍উন্মোচনকারী। বাংলাদেশের ইতিহাসবিদদের চর্চায় তৎকালীন পূর্ববাংলাকে কম পাওয়া যায়, কিন্তু এই বইয়ে এই বাংলাকে ফিরিয়ে আনার জন্য লেখকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, একজন নৃবিজ্ঞানী হিসেবে এই বইতে লেখকের অভিজ্ঞতা ও তার গভীর বিশ্লেষণমূলক আলোচনা দেখতে পেয়েছি। এখানে পশ্চিম বনাম মুসলিম বিশ্বের বিরাজমান ধারণা নিয়ে লিখেছেন। যেখানে ‍মুসলিম বিশ্ব কোনো একক জাতির মানুষকে বোঝায় না। এ অঞ্চলে নারীবাদী চিন্তক মুন্নি বেগম থেকে তসলিমা নাসরীনের চিন্তার ঐতিহাসিক পুনর্বিন্যাস দেখেছি এ বইয়ে যা গতানুগতিক পশ্চিমা ধারার বাইরে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সেন্ট্রাল উইমেন’স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভীন হাসান বলেন, মুসলিম ইতিহাসে দেখা যায় অনেক নারীরাই মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ইতিহাস পাঠের সময় দেখেছি মুর্শিদাবাদের একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন মুন্নি বেগম নামের এক প্রভাবশালী নারী। ক্ষমতার সঙ্গে স্থাপত্যের যে লেনদেন তা এই বইয়ে মুন্নি বেগমের মসজিদ নির্মাণের উল্লেখের মধ্য দিয়ে জানা যায়। এটি রাজনীতি ও ইতিহাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি একটি পাঠ্য।

অনুষ্ঠানে ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন বইটির বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশীয় সংস্করণ প্রকাশের সুযোগ ইউপিএলকে দেওয়ায় লেখককে ধন্যবাদ জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আজহারির উদ্বেগ

পাঁচ দিন সাগরে ভেসে জীবিত ফিরলেন মোরশেদ

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজে থাকছে নারী আম্পায়ার

মওলানা ভাসানী সেতুর স্বপ্নযাত্রা শুরু

বিএনপি কর্মীদের নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিলেন জয়

খাঁচায় বন্দি রেখে পাখি পালন করা কি জায়েজ আছে?

সাবেক স্ত্রীকে হত্যার পর যুবকের কাণ্ড

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

নদীতে ভাসছিল নিখোঁজ চালকের মরদেহ, উধাও অটো

টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন মোবাইল থেকে যেভাবে করবেন

১০

দুদকের দুই উপ-পরিচালক বরখাস্ত

১১

দলের স্বার্থে খেলে কপাল পুড়ল দুই ক্রিকেটারের, দাবি অশ্বিনের

১২

মহাখালীর সাত তলা বস্তিতে ভয়াবহ আগুন 

১৩

আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২টা হাতি মরে গেছে : রিজওয়ানা

১৪

প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

১৫

ঢাবির ১৮ হল সংসদের প্রার্থী ঘোষণা ছাত্রদলের

১৬

স্টার্টআপে বিনিয়োগ ও পরামর্শ দেবে কমিউনিটি ব্যাংক

১৭

মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

১৮

কুমিল্লায় ৫২টি পাসপোর্টসহ দালাল আটক

১৯

টাকা ছাড়াই খাওয়া যায় যে ক্যাফেতে, দিতে হবে প্লাস্টিক বর্জ্য

২০
X