গত জুলাইয়ের শেষদিকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম। এরপর থেকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি এই প্রেসিডেন্টকে। এমনকি তার অবস্থা নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক দলও তার সাক্ষাত চেয়ে ব্যর্থ হন।
এবার প্রেসিডেন্ট বাজুমের সর্বশেষ খবর জানিয়েছে আনাদুলু এজেন্সি। শনিবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে তার খবর জানানো হয়েছে।
তার সাবেক উপদেষ্টার বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারে এক অন্ধ প্রকোষ্ঠে প্রেসিডেন্ট বাজুমের জীবন কাটছে। সেখানে কোনো বিদ্যুৎব্যবস্থা বা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় নেই। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট বাজুমকে রাজধানী নিয়ামির বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী গোষ্ঠী। যার নেতৃত্ব দেন জেনারেল আবদোরহমানে।
হামিদো আমাদো এন গাডে নামে প্রেসিডেন্টের এক সাবেক উপদেষ্টা ব্যক্তিগত ডাক্তারের বরাতে ফেসবুকে জানান, তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো আছে। তবে তার সঙ্গে কোনো স্বজনদের যোগাযোগ নেই। গত দুই সপ্তাহ আগে তার মোবাইল বা যোগাযোগের মাধ্যম পরিসেবার বাইরে রয়েছে। এ ছাড়া তার বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিনি লিখেন, এই মুহূর্তে মশার উৎপাত ও অতিরিক্ত গরমে জিম্মিকাররীদের উচিত তার বাসভবনে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা। তার বিষয়ে পরিবারসহ সবাই উদ্বিগ্ন ও সজাগ দৃষ্টি রাখছে। অন্তরালে যেকোনো সময়ে তার যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।
এদিকে আন্তর্জাতিক দাবির মুখে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছে পারিবার। সাক্ষাতের পর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে তাকে খাবার ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এ সময় বাজুমের সঙ্গে তার স্ত্রী ও ছেলে কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার বাসভবনে অবরোধ করে রাখেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের বিদ্রোহী সদস্যরা। আটকের পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন তারা।
এরপরই দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশ করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। এমনকি সমাবেশ থেকে প্রেসিডেন্টের দলের প্রধান কার্যালয়ে আগুন দেন অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। ফলে প্রেসিডেন্ট সমর্থক ও অভ্যুত্থানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত থেকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়।
এদিকে দেশটিতে অভ্যুত্থানকে ভালোভাবে নেয়নি আফ্রিকা অঞ্চলের ১৫ দেশের জোট ইকোয়াস। গত ৬ আগস্টের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে পুনর্বহালের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল জোটটি। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর কড়া বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। ইকোওয়াসের সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের সহায়তা চেয়েছে নাইজারের জান্তা সরকার।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে পুনর্বহালের জন্য নানা পদক্ষেপে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছে, নাইজারের সেনা অভ্যুত্থানের ফায়দা তুলছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার। দেশটিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটি রয়েছে।
মন্তব্য করুন