

রাজা আসে, রাজা যায়। কিন্তু প্রজার ভাগ্য কখনো বদলায় না। সিরিয়ায়ও তেমনটা ঘটেছে। এক বছরের বেশি সময় আগে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে গেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। সিরিয়াকে দেনায় ডুবিয়ে আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এখন শান্তির জীবনযাপন করছেন তিনি। পরিবার নিয়ে রাশিয়া আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাটাচ্ছেন সুখের জীবন। এমনকি চক্ষু চিকিৎসার পড়াশোনাও করছেন বাশার আল আসাদ। সিরিয়া এক সময়ের প্রভাবশালী এই পরিবারের নিরিবিলি জীবন নিয়ে বিস্তারিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
লন্ডনে চক্ষু চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আসাদ। এখন নিজের পুরোনো সেই শিক্ষার আলো আবারও জ্বালাতে চাইছেন তিনি। রাশিয়ায় বসে নতুন করে শুরু করেছেন চক্ষু চিকিৎসার পড়াশোনা। আসাদ পরিবারের একজন বন্ধুর বরাতে এমন খবর প্রকাশ্যে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাত পাকিয়ে তিনি রাশিয়ার এলিটদের ক্লায়েন্ট বানাবেন। তবে টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের প্রবল আগ্রহ থেকেই এই পেশায় ফিরতে চান আসাদ। এমনকি সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর আগেও নাকি দামেস্কে নিয়মিত চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে প্র্যাকটিস চালিয়ে গেছেন তিনি।
সাবেক এই স্বৈরশাসকের স্ত্রী আসমা আল আসাদ লিউকেমিয়ার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তবে মস্কোয় তিনি এক্সপেরিমেন্টাল চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠছেন ধীরে ধীরে। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতেই নতুন প্লট নিয়ে হাজির হয়েছেন আসাদ। এখন নিজের সাইড স্টোরি দিয়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হতে চাইছেন তিনি। এমনকি তিনি এখন স্বেচ্ছায় মার্কিন ও রুশ মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। যদিও বিষয়টা এতটা সরল নয়। রুশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সাক্ষাৎকারই দিতে পারবেন না তিনি।
১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হন আসাদ। দীর্ঘ আর রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। জানা গেছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে রাশিয়া পালিয়ে যান আসাদ। কিন্তু তাকে নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, যেসব নেতারা ক্ষমতা হারান, তাদের ব্যাপারে পুতিনের ধৈর্য নেই বললেই চলে। তাই আসাদকে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তিত্ব কিংবা তাকে ডিনারে দাওয়াত দেওয়ার মতো অতিথিও মনে করেন না পুতিন।
ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক প্রভাবও কমে গেছে আসাদ পরিবারের। তাই মস্কো ও আমিরাতে নিরিবিলি ও একান্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে আমিরাত তো আসাদের সন্তানদের দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে। তারা সেখানে প্রায়ই ঘুরতে যান। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আসাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। বরং তার প্রাসাদে থাকা হাতেগোনা কয়েকজনের সঙ্গেই তার যোগাযোগ রয়েছে। একাকী সময় কাটালেও বিলাসিতায় কোনো কমতি নেই আসাদ কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের।
মন্তব্য করুন