জাপানে শিশুদের জন্য ইচ্ছামতো নাম রাখা আর সহজ থাকছে না। নতুন একটি আইন অনুযায়ী, সন্তানদের নামকরণে এখন থেকে শুধু সরকার স্বীকৃত কাঞ্জি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে এবং নামের উচ্চারণ অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে হতে হবে।
এই পরিবর্তন আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে চলতি সপ্তাহেই। এর মূল উদ্দেশ্য, ‘কিরাকিরা’—অর্থাৎ অতিরিক্ত চকচকে, অস্বাভাবিক বা বিতর্কিত নামকরণের প্রবণতা বন্ধ করা। খবর ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর।
প্রসঙ্গত, জাপানি সমাজে ‘কিরাকিরা নেমস’ গত কয়েক দশক ধরে বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছে। নামের মধ্যে ‘পিকাচু’, ‘নাইকি’, ‘ডায়মন্ড’, ‘পু’ (উইনি দ্য পু) কিংবা ‘কিটি চ্যান’ এর মতো চরিত্র বা ব্র্যান্ডের অনুপ্রেরণায় নাম রাখা অনেক শিশুদেরই সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতার মুখে ফেলেছে। সহপাঠীদের বিদ্রূপ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক নথিপত্রেও এমন নামকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, স্কুল, হাসপাতাল কিংবা সরকারি ফরমে শিশুর নামের অস্বাভাবিক উচ্চারণ বা কাঞ্জি অক্ষরের জটিলতা প্রায়শই বিভ্রান্তি ও দাপ্তরিক বিলম্ব সৃষ্টি করে। ফলে, একই উচ্চারণ বা সহজবোধ্য কাঞ্জির মাধ্যমে ডিজিটাল নথিপত্র সংরক্ষণকে সহজ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সন্তানদের নামকরণে সমালোচিত কিছু উদাহরণও রয়েছে, এক দম্পতি তাদের সন্তানকে নাম দিয়েছিলেন ‘অকুমা’ যার অর্থ ‘শয়তান’। অন্যদিকে, ২০২০ অলিম্পিক কমিটির সাবেক প্রধান সাইকো হাসিমোতো তার ছেলেদের নাম দেন ‘গিরিশিয়া’ (গ্রিস) ও ‘টোরিনো’ (ইতালির শহর)—যেখানে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাঞ্জি দিয়ে এই উচ্চারণ বুঝতে না পারায় অনেকেই বিভ্রান্ত হন, যা হাসিমোতোকে সমালোচনার মুখে ফেলে।
নামকরণের নতুন নিয়মে কী কী থাকছে
সন্তানের নাম রাখতে গেলে সরকার অনুমোদিত প্রায় ৩ হাজার কাঞ্জির মধ্য থেকে বেছে নিতে হবে, নামের উচ্চারণ স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে, প্রচলিত উচ্চারণ থেকে ভিন্ন উচ্চারণ ব্যবহার করতে চাইলে কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে, প্রশাসন চাইলে বিকল্প, সহজবোধ্য নাম প্রস্তাব করতে পারবে এবং সবচেয়ে অযৌক্তিক বা অপ্রচলিত উচ্চারণ বাদ দেওয়া হবে।
যদিও অধিকাংশ কাঞ্জির বহু প্রচলিত উচ্চারণ রয়েছে, তবুও অস্বাভাবিক বা চটকদার নাম ঠেকাতে অভিভাবকদের সচেতন হতে বলেছে প্রশাসন। কারণ, নাম কেবল ব্যক্তিগত পরিচিতির অংশ নয় বরং তা সামাজিক যোগাযোগ, দাপ্তরিক সেবা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেকে অবশ্য বলছেন, ভিন্নধর্মী নাম রাখা একধরনের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রকাশ—বিশেষত জাপানের মতো সমাজে, যেখানে সবাইকে এক ছাঁচে চলার চাপ বেশি। তবে সরকারের ব্যাখ্যা, এই নিয়ম সামাজিক শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বার্থেই জরুরি।
এই পরিবর্তনকে জাপানের ‘কোসেকি’ (পারিবারিক নিবন্ধন আইন)-এ একটি উল্লেখযোগ্য ও বিরল পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, কোসেকি-তেই শিশুদের নাম, জন্ম তারিখ, পরিবারভুক্ত সদস্যদের তথ্যসহ আইনি পরিচয় সংরক্ষিত থাকে।
সর্বশেষ এই আইনি পদক্ষেপ দেখিয়ে দিচ্ছে—জাপান সরকার সমাজে ভারসাম্য ও প্রশাসনিক সুশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের মধ্যেও নিয়মের ছায়া ফেলতে প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন