গরু নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে নানা আচার ও সংস্কৃতি। কোথাও গরুকে দেখা হয় দেবতা হিসেবে আবার কোথাও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে। এবার সেই গরু নিয়েই আয়োজন করা হচ্ছে বিরল এক গণভোটের। বিষয়- গরুর গলায় ঘণ্টা থাকবে কি, থাকবে না। এ গণভোটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে কয়েক শতকের এ এতিহ্য থাকবে নাকি বিলুপ্ত হবে। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কথা শুনলেও অনেকেই হয়তো গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নয়। এবার তবে গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার গল্প শোনার পালা। আর এ নিয়ে কোনো আলোচনা নয় বরং সরাসরি আয়োজন করা হয়েছে বিশাল এক গণভোটের। সেখানেই নির্ধারিত হবে গরুর গলায় ঘণ্টা থাকবে নাকি থাকবে না।
অদ্ভূত এ গণভোট আয়োজিত হচ্ছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে। বিস্তীর্ণ সমভূমি ও আল্পস পর্বতমালা দ্বারা ঘেরা দেশটির অন্যতম ঐতিহ্য হলো গরুর গলায় ঘণ্টা ঝোলানো। চারণভূমিতে ঘাস খাওয়ার সময় এসব গরুর গলায় ঝোলানো ঘণ্টা সারাক্ষণই টুংটাং করে বাজছে। তবে সবারই যে ঐতিহ্যবাহী এ প্রথা ভালো লাগে, বিষয়টি এমন নয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে মধ্য সুইজারল্যান্ডের আরওয়ানগেন গ্রামে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়। বলা হয়, একটি আবাসিক এলাকার পাশে থাকা মাঠে ১৫টি গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টার জন্য রাতে ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়ে বাসিন্দাদের জন্য। এ সমস্যা সমাধানে দুই দম্পতি রাতের বেলা গরুর গলায় ঘণ্টা সরানোর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে তারা ভোটের দাবি তোলেন।
এ সমস্যাটি সুইজারল্যান্ডের প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে উত্থাপন করতে অভিযোগের পক্ষে গ্রামের মোট বাসিন্দাদের ১০ শতাংশের সমর্থন দরকার ছিল। এদিকে এমন অভিযোগের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীরা ১ হাজার ৯৯টি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় এ উদ্যোগ আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভা পরিষদে তুলে ধরা হয়। সেখানে উপস্থিত থাকা ১৬৬ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার বিরোধিতা করেছিলেন। এ নিয়ে আগামী বছরের জুনে ভোটাভুটি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আল্পইন পবর্তমালার চারণভূমিতে চরে বেড়ানো গৃহপালিত পশুদের অবস্থান জানার জন্য একসময় এই ঘণ্টা অপরিহার্য ছিল। গ্রীষ্মকালে আল্পাইনে জমিতে কৃষিকাজের প্রচলিত রীতির অংশ হিসেবে গবাদিপশুর পালকে উঁচু পাহাড়ের চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়া হতো। এদের গলায় বাঁধা হয় আলংকারিক ঘণ্টা। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় স্থান করে নেয় এটি।
মন্তব্য করুন