ইউরোপিয়ান লিগ্যাল সাপোর্ট সেন্টার (ইএলএসসি) গত ৬ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিনি আন্দোলন দমনের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নথিতে দেখা গেছে, এসব দেশে ইসরায়েলের সমালোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত সমাবেশের অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে তিনটি দেশের মধ্যে জার্মানির দিকে ফোকাস করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ইহুদি-বিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগে কর্মচারীদের বরখাস্ত করা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনপন্থি ইভেন্টগুলোর জন্য জনসম্মুখে জায়গা দিতেও অস্বীকার করা হয়েছে।
জার্মানির একজন ফিলিস্তিনি অভিবাসী বলেন, একজন ফিলিস্তিনি অভিবাসী হিসেবে আমি সবকিছু প্রত্যক্ষ করেছি। গাজায় প্রায় তিন দশকের লাগাতার ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে থেকে আমি ২০১৫ সালে জার্মানিতে এসেছি।
আমি যুদ্ধের ক্ষত, নৃশংস ইসরায়েলি অবরোধ, ইসরায়েলি দখলদারদের হাতে আমার জনগণের ক্রমাগত জাতিগত নির্মূল হতে দেখেছি। আমরা আমাদের মাতৃভূমি থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছি এবং যখনই আমি আমার জনগণের দুর্ভোগ সম্পর্কে কথা বলার চেষ্টা করেছি তখনই আমার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আমাকে ক্রমাগত সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যেন আমি যা বলছি সে বিষয়ে সতর্ক থাকি। তারা অজুহাত দিয়েছে, আমার কথা ‘জার্মান মূল্যবোধকে’ প্রতিফলিত করে না। আমাকে বলা হয়েছে, আমি একজন ইহুদিবিরোধী, আমি একজন সন্ত্রাসী।
আমি জার্মান মূলধারার মিডিয়াতে আমার কথাগুলো শোনানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি৷ যদি আমি একটি ইসরায়েলি সংবাদপত্রের জন্য লেখার চেষ্টা করতাম, তবে আমি জার্মান মিডিয়া আউটলেটগুলোতে যা পেয়েছি তার থেকে অনেক বেশি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ পেতাম।
জার্মানির ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় ইউরোপের বৃহত্তম সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একটি। তবে পরিসংখ্যানে তাদের অদৃশ্য রাখা হয়। জার্মান পুলিশ এবং সংস্থাগুলো দ্বারা নিয়মিত ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখানো হয় এবং নজরদারিতে রাখা হয়। ফিলিস্তিনিদের জার্মান মিডিয়াতে ইহুদিবিরোধী এবং সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফিলিস্তিনিদের বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যে এই কৌশলগুলো তাদের আবাসিক অবস্থা, চাকরির সন্ধান এমনকি বাসস্থান প্রাপ্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।
এটি ফিলিস্তিনি জার্মানদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তাদের অনেকেই এখন কথা বলতে ভয় পায়। আর যারা ভয় পায় না তারা জার্মানিতে অন্য সবাই যে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার ভোগ করে তা দাবি করার জন্য তাদের নেতৃত্বে নিরন্তর সংগ্রামে ক্লান্ত। ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবীদের প্রকাশ্যে আক্রমণ করা হয়েছে এবং কলঙ্কিত করা হয়েছে, যা প্রায়ই তাদের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করেছে।
তবুও জার্মানিতে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং নীরবতা প্রতিরোধ করে চলেছে। ফিলিস্তিনিদের একটি তরুণ প্রজন্ম আছে যারা জার্মান রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলতে চায় না। অপমান ও চাপের মুখে তারা চুপ থাকে না। প্যালেস্টিনা স্প্রিচ (প্যালেস্টাইন স্পিকস)-এর মতো সংস্থাগুলো জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া এবং চ্যালেঞ্জ ছাড়াই কোনো দমনপীড়নকে চলতে দিচ্ছে না।
এখন সময় এসেছে ফিলিস্তিনকে জার্মান অপরাধ থেকে মুক্ত করার। সময় এসেছে জার্মান মূল্যবোধের নামে ফিলিস্তিনিদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া বন্ধ করার। জার্মানদের উচিত ফিলিস্তিনিদের ন্যায় ও মুক্তির সংগ্রামকে আলিঙ্গন করা।
মন্তব্য করুন