কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি : কাকে ঠেকাতে, কাকে রক্ষায়?

নতুন ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে নতুন করে তৎপরতা বেড়েছে। ছবি : সংগৃহীত
নতুন ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে নতুন করে তৎপরতা বেড়েছে। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দিন দিন আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রশ্ন জাগে- এই সামরিক জোর প্রদর্শনের উদ্দেশ্য কী? এটি কি ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, না কি ইসরায়েলের জন্য প্রতিরক্ষা?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক বক্তব্য ও পদক্ষেপ আবারও আলোচনায় এনেছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব। তিনি প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়েছেন- আমি ইরানের হাতে পারমাণবিক বোমা দেখতে চাই না। তারা যদি চুক্তিতে না আসে, তাহলে এমনভাবে বোমা ফেলব, যা তারা আগে কখনো দেখেনি।

এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো উদ্বেগ- ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, যদিও তেহরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে নতুন করে তৎপরতা বেড়েছে। সামরিক সরঞ্জাম, সেনা মোতায়েন, রণতরী আগমন- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বড় কিছুর ‘প্রস্তুতি’ নিচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির বিস্তার যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় এক ডজনের বেশি দেশে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নিচে তুলে ধরা হলো :

১. কাতার মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি অবস্থিত কাতারে। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঘাঁটিতে রয়েছে হাজার হাজার মার্কিন সেনা এবং বহু যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিমান অভিযানের প্রধান কেন্দ্র।

২. বাহরাইন বাহরাইনে রয়েছে দুটি বিমানঘাঁটি ও একটি বৃহৎ নৌঘাঁটি, যা পারস্য উপসাগরের নৌপথ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. কুয়েত এখানে একটি বিমান ঘাঁটি এবং দুটি সেনা ঘাঁটি রয়েছে। ইরাক যুদ্ধের সময় কুয়েত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান লজিস্টিক কেন্দ্র।

৪. সংযুক্ত আরব আমিরাত এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান ঘাঁটি ও দুটি নৌঘাঁটি রয়েছে। হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে এই ঘাঁটি স্থাপন করা হয়।

৫. সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমান ঘাঁটি, দুটি নৌঘাঁটি এবং একটি সেনা ঘাঁটি রয়েছে সৌদি আরবে। ইরানবিরোধী কৌশলে এই ঘাঁটিগুলোর কৌশলগত গুরুত্ব অনেক।

৬. ওমান চারটি বিমান ঘাঁটি এবং একটি নৌঘাঁটি আছে ওমানে। এসব ঘাঁটি ইরান সীমান্তের একেবারে কাছেই অবস্থিত।

৭. ইরাক ও সিরিয়া ইরাকে বর্তমানে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। সিরিয়াতেও প্রায় ২,০০০ সেনা রয়েছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এই অবস্থান ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

৮. জর্ডান, মিসর ও জিবুতি এই দেশগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বা অস্থায়ী সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। জিবুতি থেকে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নজর রাখে।

ভারত মহাসাগরে বিকল্প প্রস্তুতি : দিয়াগো গার্সিয়া

যেহেতু পারস্য উপসাগরীয় বহু দেশ ইরানে হামলার জন্য নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না, তাই যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প হিসেবে দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে বিশাল সামরিক ঘাঁটি প্রস্তুত করেছে। এখানে ছয়টি বি-টু স্পিরিট বোমারু বিমান মোতায়েন করা হয়েছে, যেগুলো দূরপাল্লার হামলায় সক্ষম।

এছাড়াও মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন ও ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রে অবস্থান করছে। এদের সঙ্গে রয়েছে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন ও পেট্রোল বাহিনী। এই সমাবেশ নিঃসন্দেহে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘাঁটিগুলো একদিকে যেমন ইরানকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত, অন্যদিকে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে সচেষ্ট। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের নিরাপত্তা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার। তাই ইরানকে ঘিরে ফেলা ও সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি যেন একইসঙ্গে প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা- দুই লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।

কোনো চুক্তি না হলে কি যুদ্ধ হবেই? নাকি এ কেবল চাপ প্রয়োগের কৌশল? এসব প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক সমীকরণের ওপরই নির্ভর করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন তৌসিফ-তিশা

স্থায়ী বসবাসের নিয়মে কড়াকড়িতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

রাবির অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনের নেতৃত্বে নজরুল-মিজানুর

এবার গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির ওপর হামলা

৩ মাস ধরে ওষুধ সংকট, রোগীরা ফিরছেন খালি হাতে

শপিং ব্যাগের মূল্য নেওয়া বন্ধে আড়ংকে লিগ্যাল নোটিশ

যুবলীগের ৩ নেতা আটক

বৃষ্টি নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

বিইউবিটির শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক জয়

খাগড়াছড়ির ঘটনায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১০

বিসিবি নির্বাচন / বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক হতে যাচ্ছেন যারা

১১

পরিবেশের অবনতি হচ্ছে ইউরোপে, ইইএর সতর্কবার্তা

১২

ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

১৩

খাগড়াছড়ির দুই সড়কে অবরোধ শিথিল 

১৪

চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এসিসি যা দিচ্ছে তার ৮ গুণ অর্থ পুরস্কার পাচ্ছে ভারত!

১৫

জামায়াত আমিরের সঙ্গে ভুটান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৬

স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার করে প্রশংসায় ভাসছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা

১৭

জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি মহাসচিব মামুনুর রশিদ গ্রেপ্তার

১৮

নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস যুক্তরাজ্যের

১৯

কুষ্টিয়ায় ৬ হত্যা: ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ১৪ অক্টোবর

২০
X