সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনের মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে। ওই দুর্ঘটনার পরপরই বিআরটিএ সুনামগঞ্জ অফিসের রেজিস্ট্রেশন ডিটেইলস বিশ্লেষণে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িত উভয় যানবাহনেরই ফিটনেস ছিল না।
গত ৬ আগস্ট দুপুরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা তালুকদার এবং সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী খুশি। অন্য দুজনের একজন শহরের আলী পাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৭৩), আরেকজন সিএনজি অটোরিকশাচালক রসিদ মিয়া (৪৫)।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, যাত্রীবাহী বাসটির ফিটনেস ২৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ছিল; কিন্তু ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বরের পর থেকে সিএনজির ফিটনেস নবায়ন হয়নি। তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এত বছর ধরে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করে আসছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে দীর্ঘদিন ধরেই ফিটনেসবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের দৌরাত্ম্য চলছে। ‘বিরতিহীন’ নামে এ ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির একাধিক অভিযোগ থাকলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। মালিক সমিতির সুপারভাইজাররা নিয়মিত গাড়ি চেক করলেও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেউ দায়িত্ব নেয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
ঘটনার পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শতাধিক শিক্ষার্থী সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। এর জেরে সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা তাৎক্ষণিকভাবে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালান।
এদিকে শহরের বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন এবং শোকসভা আয়োজন করে। তারা জানায়, এ মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি অবহেলার ফল। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচলের দায় প্রশাসনেরও রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
দাবি উঠেছে—ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে, না হলে এমন দুর্ঘটনা আবারও ঘটবে।
এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়নি। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির ডাক দেবেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ বলেন, সড়কে অহরহ ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচল করছে। কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে। সড়ক নিরাপদ করতে এসব গাড়ি বন্ধ রাখতে হবে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ বলেন, আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করছি। প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের অবহেলায় সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচল করছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। ফিটনেস ও লাইসেন্স যানবাহন বন্ধ করতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন