ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের ভয়াবহ এক হামলায় এক নারী চিকিৎসকের পরিবারের ৯টি সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে তার আরেক সন্তান ও স্বামী।
শুক্রবার (২৪ মে) গাজার খান ইউনিসে চালানো এই বর্বর হামলায় মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় একটি সম্পূর্ণ পরিবার। খবর বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মা আলা আল নাজার নামের ওই নারী চিকিৎসক গাজার নাসের হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামীও একজন চিকিৎসক।
ঘটনার সময় তিনি স্ত্রীকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়িতে প্রবেশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
এই হামলায় চিকিৎসক আলা আল নাজারের ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই প্রাণ হারায়। আহত হয় ১১ বছর বয়সী আরেক সন্তান, যাকে অস্ত্রোপচার করেন গ্রাহাম গ্রুম নামে এক ব্রিটিশ চিকিৎসক।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রুম জানান, ছোট শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করে আনা শিশুদের পোড়া মরদেহ। হৃদয়বিদারক সেই চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ড. মুনির আলবোরস জানান, হামলার সময় পরিবারটি তাদের নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিল। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি বেসামরিক পরিবার, যেখানে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা যোদ্ধার উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি।
ব্রিটিশ চিকিৎসক গ্রাহাম গ্রুমও এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলেন, চিকিৎসক দম্পতির কেউই রাজনীতি বা হামাসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমনকি তারা সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখিও করতেন না।
শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে আলা আল নাজারের ৯ সন্তানও রয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। কিন্তু বাস্তবে হামলার বলি হচ্ছে অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনি। প্রতিদিনের মতোই এদিনও গাজার সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের নতুন অধ্যায়।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছে।
মন্তব্য করুন