ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘ দুই দশক ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে আসছিলেন। অনেকেই তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করত, বিশেষ করে ইরান। ২০১৮ সালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছিলেন, ‘একই কথা বারবার বলে সবাইকে বোকা বানানো যায় না।’
কিন্তু অবশেষে, ২০২৫ সালে এসে নেতানিয়াহু নিজেই ইরানের বিরুদ্ধে এককভাবে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে শুক্রবার (১৩ জুন) জানায় রয়টার্স। তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি গণহত্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘যেভাবে তখন সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, এবার আমরা তা হতে দেব না।’
ইরান দাবি করে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, ইরান তাদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
নেতানিয়াহু বহুবার জাতিসংঘে ইরানবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি পারমাণবিক বোমার কার্টুনও দেখিয়েছেন। তবে আগের মেয়াদগুলোতেও হামলার ঝুঁকি ছিল। কারণ হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের আশঙ্কা থাকত।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহকে সামরিকভাবে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে নেতানিয়াহু ইরানে সরাসরি হামলার সাহস পান।
ইসরায়েলের সামরিক সূত্র জানায়, ইরানের চারটি রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়, যার মধ্যে একটি ছিল পারমাণবিক কেন্দ্র নাতানজের কাছে।
তবে নেতানিয়াহুর জন্য একটি ধাক্কা আসে ২০২৫ সালের এপ্রিলে। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আমেরিকা ও ইরান সরাসরি পরমাণু আলোচনা শুরু করবে। যদিও ইসরায়েল ও আমেরিকা এ হামলার বিষয়ে আগে থেকেই সমন্বয় করেছিল বলে এক কর্মকর্তা জানান।
নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা এখন অনেকটাই কমেছে। ২০২৩ সালের হামাস আক্রমণে দেশের ভেতরে অনেকেই তাকে দোষ দেন। গাজা যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও এনেছে।
এ ছাড়া তিনি নিজেই দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত এবং আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। ইসরায়েলি জনমত বলছে, গাজা যুদ্ধ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য তা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবু তিনি বিশ্বাস করেন, ইরানের বিরুদ্ধে এই সামরিক পদক্ষেপ ইতিহাসে তাকে ‘জাতির রক্ষাকর্তা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
মন্তব্য করুন