কাতারের আল উদেইদ মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। একই সঙ্গে তেহরান যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন এবার শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়বে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানায়, রোববার যুক্তরাষ্ট্র যে ‘নির্লজ্জভাবে’ ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো এখন আমাদের দৃষ্টিতে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু।
আইআরজিসি আরও জানায়, ইরানের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার ওপর যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে। আমরা আর আগ্রাসনকে চুপচাপ মেনে নেব না- জবাব হবে আরও কঠোর, আরও স্পষ্ট।
হামলাটি ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে চালানো হয়েছে বলেও জানানো হয়। আইআরজিসি সাফ জানায়, হিট-অ্যান্ড-রান—অর্থাৎ একতরফা আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার যুগ শেষ হয়ে গেছে। এখন থেকে প্রতিটি আঘাতের জবাব দেওয়া হবে সমপরিমাণ শক্তি দিয়ে।
এছাড়া, এই বিবৃতিতে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে ইসরায়েলের বৃহৎ সামরিক পরিকল্পনার অংশ বলেও আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, জায়োনিস্ট সত্তা (ইসরায়েল) বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
ইরানের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কাতারে আল উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা হয়তো ইরানের প্রতিশোধের সূচনা মাত্র। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ জুন) স্থানীয় সময় বিকালে কাতারের রাজধানী দোহার কাছে অবস্থিত আল উদেইদ মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। রয়টার্স জানায়, হামলার সময় দোহায় বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ শোনা যায়।
অ্যাক্সিওস এবং বিবিসি অ্যারাবিক ইসরায়েলি এক কর্মকর্তার বরাতে হামলার খবর নিশ্চিত করে। ইরানের তাসনিম নিউজ জানায়, এই হামলা ছিল ‘প্রতিশোধমূলক’। হামলার আগেই ঘাঁটিটির প্রতি হুমকি আসছিল বলে জানিয়েছেন এক পশ্চিমা কূটনীতিক।
হামলার পর কাতার সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ঘরের ভেতর অবস্থান করার পরামর্শ দেয়।
প্রসঙ্গত, আল উদেইদ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি, যেখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
মন্তব্য করুন