আজ ১৬ সেপ্টেম্বর কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হলে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মাশা আমিনির মৃত্যুবার্ষিকীর আগমুহূর্তে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ইরানের বিরুদ্ধে একসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
হিজাব ঠিকমতো না পরার কারণে মাশা আমিনি নামে ওই তরুণীকে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ। পরে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে সংহতি জানালে একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়। গ্রেপ্তার করা হয় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ইরানের বাইরেও। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দমনপীড়ন বন্ধ করতে ইরান সরকারকে আহ্বান জানায়।
কিন্তু তারপরও দমনপীড়ন অব্যাহত থাকে। বরং বিদেশি শক্তির মদদে এ আন্দোলন হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ইরান সরকার। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার ও জেলে নিয়ে নির্যাতনের বহু অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভে জড়িত থাকার অপরাধে কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়ে তা কার্যকরও করা হয়েছে। সর্বশেষ গত আগস্টে ইরানে নারীদের হিজাব পরা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর আইন প্রস্তাব করা হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক সহিংস দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুতে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার, ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্য অংশীদাররাও চলতি সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা ইরানিদের মানবাধিকার দমন করবে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখব।
পৃথক আরেক বিবৃতিতে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সহিংস ধরপাকড়ের অভিযোগে ২৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। এ তালিকায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ১৮ কর্মকর্তা এবং ইরানি কারাপ্রধান আছেন। সামনে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলেও জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান।
এদিকে তেহরানের বাধ্যতামূলক হিজাব আইন বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্তগ্রহণ পর্যায়ে যারা রয়েছে তাদের নিশানা করে নিষেধাজ্ঞার আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। তাদের মধ্যে রয়েছে ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামিক দিকনির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রী, তার ডেপুটি, তেহরানের মেয়র ও ইরানি পুলিশের এক মুখপাত্র রয়েছে। এ ছাড়া মাশা আমিনির মৃত্যুর পর শুক্রবার ১৪তম বারের মতো ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কানাডা।
মন্তব্য করুন