

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা স্থবির হয়ে পড়ায় গাজা উপত্যকার বিভক্তির আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একদিকে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল, অন্যদিকে হামাসশাসিত এলাকা হিসেবে দুই ভাগে ভাগ হতে পারে গাজা।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছয়জন ইউরোপীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি কার্যত থমকে গেছে। এখন গাজার পুনর্গঠন ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত অংশেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী বিভাজন তৈরি হতে পারে।
পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে। এর আওতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বর্তমানে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণের রাফাহ শহর, গাজা সিটির কিছু অংশ, অন্যান্য নগরাঞ্চল ও বেশিরভাগ কৃষিজমি। বাকি অংশে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করছেন। সেখানকার অধিকাংশ মানুষ ধ্বংসস্তূপের মাঝে কিংবা ত্রাণ শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নভেম্বর মাসে ধারণ করা ড্রোন ফুটেজে গাজা সিটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা গেছে। ইসরায়েলের হামলার পর এলাকা এখন কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত: একাংশে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ, অন্যাংশে হামাসের।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলকে তথাকথিত ‘ইয়োলো লাইন’ থেকে আরও পিছু হটার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন, বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব রয়েছে। তবে পরিকল্পনায় কোনো সময়সীমা বা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার স্পষ্ট কাঠামো নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া ইসরায়েল পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা মেনে নিচ্ছে না এবং বহুজাতিক বাহিনী নিয়েও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি মানামায় এক নিরাপত্তা সম্মেলনে বলেছেন, আমরা এখনো নানা ধারণা নিয়ে কাজ করছি। সবাই এই সংঘাতের সমাপ্তি চায়। প্রশ্ন হলো, কীভাবে তা সম্ভব করা যাবে?
ইউরোপীয় কর্মকর্তা ও এক সাবেক মার্কিন কূটনীতিকসহ ১৮টি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনো হস্তক্ষেপ না হলে ইয়োলো লাইনই গাজার অনানুষ্ঠানিক সীমান্তে পরিণত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব করেছে। এতে বহুজাতিক বাহিনী ও অন্তর্বর্তী সরকারকে দুই বছরের ম্যান্ডেট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দশজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশ এখনো সেনা পাঠাতে দ্বিধায় রয়েছেন। বিশেষ করে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলো শান্তিরক্ষার বাইরে কোনো সংঘাতে জড়াতে বা হামাসের সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলায় যেতে অনিচ্ছুক।
মন্তব্য করুন