ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে ঘিরে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। গাজায় বোমা হামলার প্রতিবাদে এবং দেশটিকে চাপে রাখতে লেবাননের সীমান্ত থেকে ইসরায়েলে হামলা করছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এ হামলায় রকেট, ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বললেও ইসরায়েলকে ধরাশায়ী করতে তেমন সুবিধা হচ্ছে না। সম্প্রতি হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের ঘাঁটিতে হামলার কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পরও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এও শোনা যাচ্ছে, এসব সতর্ক করার জন্য। গোষ্ঠীটির মূল অস্ত্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরায়েলের দিকে দেড় লাখ রকেট ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রাখা হয়েছে। সংকেত পেলেই তছনছ হয়ে যাবে তেলআবিব।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা গেছে, হিজবুল্লাহর কাছে দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। অধিকাংশই কয়েক কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তবে একাধিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, তাদের কাছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা লেবানন থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে হামলা করতে সক্ষম।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এক সংবাদ সম্মেলনে হিজবুল্লাহকে নিয়ে একটি মূল্যায়ন করেছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাকও উপস্থিত ছিলেন। রবার্ট গেটস বলেছিলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় হিজবুল্লাহর কাছে অনেক বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। রকেটসহ বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করেছে তারা। এসব কাজে ইরান তাদের সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদকে সহযোগিতা করার সময় অর্জিত অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাচ্ছে হিজবুল্লাহ।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে নেই, এমন সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল্লাহকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রসজ্জিত বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৮ সালে এ গবেষণা করা হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর কাছে বিপুল পরিমাণ ‘ডাম্ব’ রকেট রয়েছে। পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান-বিধ্বংসী, ট্যাংক-বিধ্বংসী ও জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে তাদের ভান্ডারে।
এদিকে হিজবুল্লাহর তৎপরতায় বসে নেই ইসরায়েল। আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, লেবাননের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় একটি সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলা চালিয়ে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে, সামরিক একটি পোস্টসহ দক্ষিণ লেবাননের একাধিক পর্যবেক্ষণ চৌকিতে এসব হামলা করা হয়।
ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিনই গোষ্ঠীটির সদস্যদের নিহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিবৃতিতে বলেছেন, হিজবুল্লাহ যদি এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তবে তাদের অবস্থা গাজার মতোই হবে।
মন্তব্য করুন