বিদেশি পর্যটক ও বহিরাগত বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছেন মেক্সিকোর হাজার হাজার নাগরিক। তাদের অভিযোগ, রাজধানীর বাসস্থানগুলো বহুলাংশে পর্যটনকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে এবং মালিকরা স্বল্পমেয়াদি ভাড়ার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এর ফলে বাসা ভাড়া দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাসিন্দাদের জন্য আবাসনের সংকট দেখা দিচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গত ৪ জুলাই মার্কিন স্বাধীনতা দিবসে হাজারো মানুষ রাজধানীর কনডেসা, রোমা ও লা হুয়ারেজ এলাকার রাস্তায় নেমে আসেন। তারা বহিরাগত বিনিয়োগ বন্ধ এবং পর্যটক সীমিত করার দাবি জানান। শুরুতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও এখন তা সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।
শুধু কনডেসায়ই প্রতি পাঁচটি বাসার একটি এখন স্বল্পমেয়াদি ভাড়া বা পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবহারে চলে গেছে। ক্রমবর্ধমান এই পর্যটকীকরণ স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অভিযোগ উঠেছে, অভিজাত এলাকায় স্থানীয়দের উচ্ছেদ করে বিদেশি পর্যটক ও ডিজিটাল নোম্যাডদের জন্য বাসস্থান তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন মেক্সিকোর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলেও হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া অননুমোদিত হলিডে অ্যাপার্টমেন্ট ও স্বল্পমেয়াদি ভাড়ার প্রবণতা রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয়কে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে স্থানীয়রা ধীরে ধীরে নিজেদের এলাকা থেকে উৎখাত হচ্ছেন— হারাচ্ছেন শিকড়, সম্প্রদায়ের বন্ধন এবং সংস্কৃতির আসল রূপ।
প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও বিক্ষোভে পরে সহিংসতা দেখা দেয়। মুখোশধারী একদল তরুণ পর্যটককেন্দ্রিক ক্যাফে ও দোকানে ভাঙচুর চালায় এবং দেয়ালে দেয়ালে লেখে— “ফুয়েরা গ্রিঙ্গো!” অর্থাৎ “বিদেশিরা বের হও।” তবে প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম এ ঘটনাকে বিদ্বেষমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, “যতই ন্যায্য দাবি হোক, সমাধান কখনোই হতে পারে না যে বিদেশিদের দেশ থেকে বের হয়ে যেতে হবে।”
স্থানীয় পরিবারগুলো বলছে, বহিরাগত বিনিয়োগকারীদের কারণে তারা জোরপূর্বক উচ্ছেদ হচ্ছেন। যেমন, লা হুয়ারেজ এলাকায় ১৯৭৭ সাল থেকে বসবাসকারী এরিকা আগুইলার পরিবারকে ২০১৭ সালে বাসা ছাড়তে হয়। তাদের বাসভবনটি পরিণত হয়েছে বিলাসবহুল ডলারভিত্তিক অ্যাপার্টমেন্টে। এরিকার আক্ষেপ— “এটা আমাদের মতো মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়নি।”
অধিকারকর্মী সের্হিও গনসালেস বলেন, “আমরা এক ধরনের নগরযুদ্ধের মুখোমুখি। শুধু লা হুয়ারেজ থেকেই গত এক দশকে ৪ হাজার পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে।” তার দাবি, ভাড়া বেড়ে গেছে দশগুণ, যা নিছকই মুনাফার খেলা।
ক্রমবর্ধমান জনঅসন্তোষের মধ্যে মেক্সিকো সিটির মেয়র ১৪ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন— ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ এসেছে অনেক দেরিতে। সমালোচকরা আরও বলেন, আগের মেয়র থাকাকালেই শেইনবাউম বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে এয়ারবিএনবির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন।
স্থানীয়দের মধ্যে বিদেশিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। অনেকে আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের অভিযুক্ত করছেন সংস্কৃতিকে উপেক্ষা ও কর ফাঁকির জন্য। তবে এরিকার মতো কেউ কেউ বিদেশিদের দায়ী না করে বরং নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন।
তবে সবার এক কথাই— অভিজাত এলাকায় পুরোনো সম্প্রদায়, পরিবার ও ছোট ব্যবসা হারিয়ে যাচ্ছে। এরিকার ভাষায়, “লা হুয়ারেজের আত্মা মরে গেছে; একে একে সব গাছ তুলে ফেলা হলে যেমন মরুভূমি তৈরি হয়, আমাদের এলাকাও তেমনি হয়ে গেছে।”
মন্তব্য করুন