কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা বদলে দেয় আকাশ ভ্রমণের সব নিয়মকানুন

ভিন্ন ঘটনার ছবি : সংগৃহীত
ভিন্ন ঘটনার ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা আকাশ পথে ভ্রমণের অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। মাত্র ২০ মিনিটের সেই যাত্রায় ঘটে যাওয়া বিশ্বের প্রথম প্লেন ছিনতাইয়ের রেশ আজও রয়ে গেছে।

দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত ছোট্ট দুটি দ্বীপ। হংকং ও ম্যাকাও—আজ আধুনিক ফেরিতে এক দ্বীপ থেকে আরেকটিতে যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। অথচ একসময় সেই যাত্রা সম্পন্ন হতো মাত্র ২০ মিনিটে এক উড়ন্ত সিপ্লেনে।

হংকং ও ম্যাকাও রুটে ‘মিস ম্যাকাও’ নামে একটি ক্যাটালিনা সি-প্লেন চালাতো ম্যাকাও এয়ার ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি। যাত্রীদের কেউ কেউ এটিকে বলতেন ‘সিগারেট ফ্লাইট’। কারণ এই যাত্রাপথে একটি সিগারেট ধরিয়ে শেষ করার আগেই প্লেন পৌঁছে যেত গন্তব্যে। মজার ব্যাপার হলো, ওই সময় টিকিট কাটার জন্য অগ্রিম বুকিংয়ের প্রয়োজন ছিল না; বাসের মতো প্লেনে ওঠার সময়ই টিকিট কেটে নেওয়া যেত।

১৯৪৮ সালের ১৬ জুলাই ‘মিস ম্যাকাও’ নামের সেই প্লেনে ছিলেন ২৭ জন—দুই পাইলট, একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট এবং ২৪ যাত্রী। প্লেনটি হংকংয়ের কাই টাক বিমানবন্দরে পৌঁছায়নি। জলসীমায় উদ্ধার হয় ধ্বংসাবশেষ, আর বেঁচে ফেরেন মাত্র একজন—২৪ বছর বয়সী ধানচাষি ওয়াং ইউ। শুরুতে নিজেকে সাধারণ যাত্রী বলে দাবি করলেও পুলিশের সন্দেহ ও তার পালানোর চেষ্টা অবশেষে সব উল্টে দেয়।

ওয়াং পরে স্বীকার করেন, তিনি তিন সহচরের সঙ্গে প্লেন ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল, প্লেন হাইজ্যাক করে দক্ষিণ চীনের গুয়াংডংয়ে নিয়ে যাওয়া, যাত্রীদের লুট করা এবং মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু ছিনতাইয়ের সময় পাইলট ডেল ক্রেমার প্রতিরোধ করেন, শুরু হয় ধস্তাধস্তি। গোলাগুলিতে দুই পাইলট নিহত হন, আর ক্রেমারের দেহ পড়ার ফলে ককপিটের জয়স্টিক চেপে গিয়ে প্লেনটি সোজা সমুদ্রে আছড়ে পড়ে।

প্লেনে যাত্রী বেশে থাকা ওই ছিনতাইকারীরা বন্দুক লুকিয়ে রেখেছিল পায়ের সঙ্গে সুতো দিয়ে বেঁধে, আর বুলেট ছিল জুতার তলার ফাঁপা অংশে। এ ঘটনা এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে, কেউ তখন ‘হাইজ্যাকিং’ শব্দটাও ব্যবহার করেনি—তখন একে বলা হচ্ছিল ‘এয়ার পাইরেসি’ বা বিমান ডাকাতি।

‘মিস ম্যাকাও’ হাইজ্যাক ছিল ‘আকাশপথে অপরাধের সূচনা বিন্দু’। তখন অনেকেই ভাবতেন এটি একক ঘটনা। কিন্তু ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দেখা গেল প্রতি সাড়ে পাঁচ দিনে একটি করে প্লেন ছিনতাই হচ্ছে। কেউ চাইত মুক্তিপণ, কেউ রাজনৈতিক আশ্রয়, কেউ আবার যাত্রীদের লুট করত।

এই ভয়াল সময়েই তৈরি হয় আকাশপথে নিরাপত্তার কাঠামো—মেটাল ডিটেক্টর, এক্স-রে, কড়া নজরদারি। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন নিরাপত্তা স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করেন। ১৯৭০ সালে দ্য হেগে গৃহীত হয় প্লেন হাইজ্যাকবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন। এর মাধ্যমে হাইজ্যাককে ঘোষণা করা হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ হিসেবে। পরে ২০০১ সালের ৯/১১ হামলা ও বিভিন্ন চক্রান্ত সব কিছুর ওপর আরও কঠোর নিরাপত্তা চাপিয়ে দেয়। বর্তমানে ম্যাকাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ছোট প্রদর্শনী কক্ষে সংরক্ষিত আছে ‘মিস ম্যাকাও’র সেই ইতিহাস, যা বদলে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীর আকাশভ্রমণের নিয়মনীতি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিইউবিটিতে ‘জুলাই শহীদ দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্রাজিলিয়ান নাগরিক রিমান্ডে, সাংবাদিকদের ওপর চড়াও 

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলায় জামায়াতের বিবৃতি

রক্তদানে প্রযুক্তির ছোঁয়া : নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ‘ব্লাডলিংক’ উদ্বোধন

জয় দিয়ে সিরিজ শেষের স্বপ্ন বাংলাদেশের

গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে, প্রশ্ন জামায়াত আমিরের

কাঠগড়ায় ব্লেড দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা ধর্ষণ মামলার আসামির

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলায় চরমোনাই পীরের বিবৃতি

সারজিস-নাসিরের সঙ্গে কথা বলেছি, এখনো সবাই নিরাপদ : জুনায়েদ

গোপালগঞ্জে ডিসির বাংলোয় হামলা, পুলিশ সদস্য আহত

১০

সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

১১

রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

১২

গোপালগঞ্জের ঘটনায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাইলেন রাশেদ

১৩

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা  / রবিনসহ আরও ৭ আসামি রিমান্ডে

১৪

গোপালগঞ্জে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন 

১৫

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় বিএনপির বিবৃতি

১৬

ইসির ওয়েবসাইটে প্রতীকের তালিকায় দাঁড়িপাল্লা

১৭

গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউসে এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবস্থান

১৮

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি

১৯

যদি বেঁচে ফিরি তাহলে মুজিববাদের কবর রচনা করেই ফিরব : সারজিস 

২০
X