ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য।
একইসঙ্গে পশ্চিম তীরের চরমপন্থি বসতিস্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে লন্ডন, যা কূটনৈতিকভাবে জোরালো বার্তা বহন করছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২০ মে) এই ঘোষণা আসে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের ‘গাজায় চলমান সামরিক অভিযান নিয়ে ভীত ও ক্ষুব্ধ’ প্রতিক্রিয়ার পর। বিষয়টি প্রথমে প্রকাশ করে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য সরকার জানায়, আমরা বিদ্যমান চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও, গাজা ও পশ্চিম তীরে ভয়াবহ নীতিমালা অনুসরণকারী নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে নতুন ও উন্নততর ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের আলোচনা এখন এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
এছাড়া, পশ্চিম তীরে সহিংসতা উসকে দেওয়া ও তাতে অংশ নেওয়া তিন ব্যক্তি, দুটি অবৈধ বসতি এবং দুটি সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন কুখ্যাত বসতিস্থাপনকারী জোহার সাবাহ, যিনি ফিলিস্তিনিদের জমি দখল ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত নভেম্বরে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন আরও এক দখলদার নেত্রী ড্যানিয়েলা ওয়েইস, যিনি পশ্চিমতীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের পুরনো সক্রিয় মুখ। তিনি কেদুমিম বসতির সাবেক মেয়র এবং নতুন বসতি স্থাপন উৎসাহিতকারী ‘নাখালা মুভমেন্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন হারেল লিবি এবং তার প্রতিষ্ঠান লিবি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার, কোকো’স ফার্ম ও নিরিয়া’স ফার্ম। এদের সবাইকে আর্থিক লেনদেন, ভ্রমণ এবং পরিচালকের দায়িত্ব পালনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিম তীরের বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর ১,৮০০-রও বেশি হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য তুলে ধরে তারা এসব নিষেধাজ্ঞাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, আমি নিজ চোখে বসতিস্থাপনকারীদের সহিংসতার ফলাফল দেখেছি- ভুক্তভোগীদের ভয় ও হামলাকারীদের দম্ভ। আজকের নিষেধাজ্ঞা প্রমাণ করে, আমরা এ ধরনের উগ্রপন্থিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকারকে অবশ্যই সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের ব্যর্থতার ফলেই ফিলিস্তিনি জনগণ ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধান হুমকির মুখে পড়েছে।
তবে যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপকে একতরফা আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছে ইসরায়েল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এই চুক্তি দুই দেশের জন্যই লাভজনক। যুক্তরাজ্য সরকার যদি রাজনৈতিক স্বার্থে নিজ অর্থনীতিকেই ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়, তাহলে সেটি তাদেরই সিদ্ধান্ত। পশ্চিম তীরের নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক এবং দুঃখজনক। বাইরের কোনো চাপ আমাদের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার লড়াই থেকে সরাতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি বাহিনী গত সপ্তাহে গাজায় নতুন অভিযান শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল গোটা গাজা উপত্যকার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। রবিবার আইডিএফ জানায়, তারা হামাসের বিরুদ্ধে ৬৭০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে বহু হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। গাজার উত্তর ও দক্ষিণে নতুন করে সেনা মোতায়েনও শুরু হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের একটি দৃশ্যমান প্রতিফলন, যা ভবিষ্যতে আরও কূটনৈতিক চাপের ইঙ্গিতও দিতে পারে।
মন্তব্য করুন