যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত কর ও ব্যয়সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইন— ‘বিগ বিউটিফুল বিল’। বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ৫১টি এবং বিপক্ষে ৫০টি। সমানসংখ্যক ভোটের পর টাই-ব্রেকিং ভোট দিয়ে এটি পাস করান ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
২৪ ঘণ্টার টানা বিতর্ক শেষে মঙ্গলবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এখন বিলটি ফের পাঠানো হচ্ছে প্রতিনিধি পরিষদে, যেখানে এটি নিয়ে আবারও আলোচনা ও সংশোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে প্রতিনিধি পরিষদে বিলটির প্রাথমিক সংস্করণ খুবই অল্প ব্যবধানে পাস হয়েছিল এবং তারপর এটি সিনেটে গিয়েছিল। এখন প্রতিনিধি পরিষদে অনুমোদন পেলে বিলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সইয়ের জন্য পাঠানো হবে, যা আইনে পরিণত হওয়ার শেষ ধাপ।
ট্রাম্প বিলটির নাম দিয়েছেন ‘বিগ বিউটিফুল বিল’। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে বিলটি প্রেসিডেন্টের টেবিলে পৌঁছানোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। তবে বিতর্ক ও মতবিরোধের কারণে সেই সময়সীমা পূরণে বিলম্ব হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এই বিল চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এর আওতায় উচ্চ আয়ের মার্কিন নাগরিকেরা কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে, মেডিকেইড- এর মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির ব্যয় কমে যাবে প্রায় লক্ষ কোটি ডলার।
তাছাড়া এ বিল কার্যকর হলে অভিবাসন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাখাতে ট্রাম্পের অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করাও সহজ হবে।
কী আছে ‘বিগ বিউটিফুল বিল’-এ?
ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল লক্ষ্য কর ছাড় প্রদান, ব্যয় কমানো, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং অভিবাসন নীতিকে আরও কঠোর করা।
কর ছাড়
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত রাজ্য ও স্থানীয় কর ছাড় পান। নতুন আইনে এই সীমা বাড়িয়ে ৫ বছরের জন্য ৪০ হাজার ডলার করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া বকশিশ, ওভারটাইম আয়ের অর্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি কেনার জন্য নেওয়া ঋণের সুদের ওপর কর মওকুফ করা হবে।
এইসব উদ্যোগ মিলিয়ে সরকার প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার কর ছাড় দিতে যাচ্ছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন
বিলে সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে : অভিবাসীদের জন্য ১ লাখ শয্যার আটক কেন্দ্র নির্মাণে ৪৫ বিলিয়ন ডলার, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ও ২০২৯ সালের মধ্যে ১০,০০০ নতুন ইমিগ্রেশন পুলিশ (আইসিই) নিয়োগ।
এই বিপুল ব্যয় সামলাতে সরকার স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে বড় ধরনের কাটছাঁট করতে চায়। এর ফলে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ এই সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। অনুমান করা হচ্ছে, নতুন আইন কার্যকর হলে ১ কোটিরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারেন।
কে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন?
এই বিল থেকে ধনীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুযায়ী, দরিদ্রদের আয় গড়ে ২.৫ শতাংশ কমবে, কারণ তাদের জন্য প্রাপ্ত সেবা কমে যাবে। বিপরীতে, ধনীদের আয় গড়ে ২.২ শতাংশ বাড়বে। এমনটা ঘটবে মূলত কর ছাড়ের সুবিধার কারণে।
সমালোচকরা বলছেন, এই বিতর্কিত বিল তাই একদিকে কর ছাড়ের মাধ্যমে উচ্চবিত্তদের স্বস্তি দিচ্ছে, অন্যদিকে জনকল্যাণমূলক ব্যয় হ্রাসের কারণে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন