

দীর্ঘ বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সরাসরি বৈঠক হয়েছে। ২০১৯ সালের পর এটি দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। যেখানে তাদের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে একটি চুক্তি হয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠকে বিরল খনিজ নিয়ে চুক্তি হয়েছে। এ বৈঠককে সফল বলেছেন ট্রাম্প। বৈঠক থেকে আসা সিদ্ধান্তেও সে কথার পক্ষে প্রমাণ মিলেছে। পরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, চীনের পণ্য আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করেছেন ট্রাম্প। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের এ চুক্তির প্রভাব পড়বে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।
আলজাজিরার এক খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। একত্রে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪৩ শতাংশ এবং বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে এ দুই দেশ। ২০২৪ সালে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। এ সম্পর্কে উত্তেজনা কমলে তা শুধু দুই দেশের জন্য নয় বরং ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে এ দুই পরাশক্তির ওপর বাণিজ্যিকভাবে নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য এ প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হিসেবে যদি বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে কেন্দ্র করে দুটি পৃথক অর্থনৈতিক ব্লকে বিভক্ত হয় তাহলে বৈশ্বিক জিডিপি দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। সম্প্রতি চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান তৈরিতে অপরিহার্য। এর জবাবে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব পদক্ষেপ কার্যকর হলে তা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তবে এপেক সম্মেলনের আগে দুই দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ট্রাম্প ও শি উত্তেজনা প্রশমনে সম্মত হয়েছেন। জার্মান অর্থনীতিবিদ রলফ জে. ল্যাংহ্যামার মনে করেন, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি যুদ্ধ কমানো এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, উত্তেজনা কমলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৩.২ শতাংশ করেছে, যা এপ্রিলের ২.৮ শতাংশ থেকে উন্নীত হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনৈতিক কাঠামোগত পার্থক্য এতটাই গভীর যে, স্থায়ী সমঝোতা কঠিন।
এর মধ্যে রয়টার্স খবর দিয়েছে, চীনের পণ্য আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করেছেন ট্রাম্প। বিনিময়ে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফের সয়াবিন আমদানি শুরু, বিরল খনিজ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং অবৈধ মাদক ফেন্টানিল পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মতে, এটা একটা অসাধারণ বৈঠক ছিল।’
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, তারা চীনের সঙ্গে আলোচনার একটি কাঠামো তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে এবং বিরল খনিজ রপ্তানির সব বিধিনিষেধও মুলতবি করা হবে।
ওই খবর প্রকাশের পর থেকেই ট্রাম্প বারবার বলে এসেছেন, শির সঙ্গে শিগগির তার চুক্তি হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে চীন-মার্কিন বাণিজ্য বিরোধের উত্তেজনা কমে আসবে, যার ইতিবাচক প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পড়বে।
মন্তব্য করুন