

চলতি বর্ষা মৌসুমের পানি চলে যেতে না যেতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পয়েন্টে পদ্মা নদীতে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গত আট দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে আসা সারবোঝাই এমভি আম্বু হালিমা-৪ নামের একটি জাহাজ আটকে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষার পানি কমতেই উপজেলার হারুকান্দি থেকে গোপীনাথপুর পর্যন্ত নদীর এ পার থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে নদীর মাঝ দিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে। প্রায় তিন বছর আগে প্রথম এ চরটি দেখা গেলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে তা ডুবে যায়। বর্ষার পানি কমা শুরু হতেই আবার জেগে ওঠে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আন্ধারমানিক ও বাহাদুরপুর ঘাট থেকে প্রতিদিন ১০টি ট্রলার যাতায়াত করে দুর্গম চরাঞ্চল হরিণাঘাট ও সেলিমপুর। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করে দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। এ ছাড়াও ট্রলারে চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যসহ সার ও অন্যান্য মালামাল আনা নেওয়া করে থাকে। নদীর নাব্যসংকটে এসব মালামাল আনা নেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে দাবি করেন চরাঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর এ পাড় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে লম্বা ধু-ধু বালুচর। বালুচরের পাশেই দেখা যায় আটকে আছে একটি জাহাজ।
জাহাজের মাস্টার মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টার সময় ডুবোচরে আমাদের জাহাজটি আটকে যায়। আজ আট দিন ধরে আমরা বসে আছি। আমরা চট্টগ্রাম থেকে টিএসপি সার নিয়ে নগরবাড়ি যাব। সময়মতো সার পৌঁছে দিতে না পারলে তো কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেক চেষ্টা করেও এখনো আমরা জাহাজ নামাতে পারছি না। প্রতি বছর এই অঞ্চলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের অনুরোধ নৌরুট সচল রাখতে এসব ডুবোচর ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ প্রসারিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
আন্ধারমানিক ঘাটের ট্রলারের মাঝি অসীম বলেন, আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন ৬টি ট্রলারে চরাঞ্চলের মানুষজন যাতায়াত করে। এখান থেকে নদীর ওপারের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। কিন্তু নদীর মাঝ দিয়ে লম্বা ডুবোচর জেগে ওঠায় প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে যেমন সময়ও বেশি লাগে, তেমনি তেলের খরচও বেশি হয়।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ডুবোচর ড্রেজিং আমাদের অধীনে না। আমরা সাধারণ নৌরুট ক্লিয়ার রাখতে কাজ করি। এসব এলাকায় যদি নাব্যসংকট দেখা দেয় তাহলেই আমরা ড্রেজিং করে থাকি। এ ছাড়াও প্রতিটি জাহাজে নৌরুট শনাক্তের জন্য পাইলট থাকে। তারা যদি কোনো এলাকা ড্রেজিং প্রয়োজন মনে করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রিকোয়ারমেন্ট দেয়।
তিনি বলেন, প্রতিটি পাইলটই রুট শনাক্ত করে জাহাজ পরিচালনা করেন। যে জাহাজটি আটকে আছে ওই জাহাজে সম্ভবত পাইলট ছিলেন না। পাইলট থাকলে হয়তো এমনটি হতো না। কারণ পাইলটরা পানির রং দেখলেই বুঝতে পারেন কোথায় পানি কম বেশি আছে।
মন্তব্য করুন