একজন বা দুজন নয়, প্রায় দুই হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছেন একটি সেতু থেকে লাফ দিয়ে। ১৯৩৭ সালে উন্মুক্ত করা এ সেতুটি তাই একপ্রকার অভিশপ্ত হিসেবেই পরিচিত স্থানীয়দের কাছে। প্রতি বছর সেতুটি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন, গড়ে প্রায় ৩০ জন লোক। খুব কম ভাগ্যবানই আছেন যারা এ সেতু থেকে আত্মহত্যার জন্য লাফ দিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। অবশেষে সেতুটির আত্মঘাতী চরিত্র বদলে ফেলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সুইসাইড ব্রিজ হিসেবে পরিচিত সেতুটি অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে। যেটিকে গোল্ডেন গেট ব্রিজ নামে ডাকা হয়। সেতুটি চালুর ৮৭ বছর পর আত্মহত্যা রুখতে সেখানে লাগানো হয়েছে স্টিলের জাল। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজে আত্মহত্যা প্রতিরোধক জাল লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধ জালটি প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা। যা সেতুটির প্রায় ৯৫ শতাংশ জায়গাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে। যেসব পরিবারগুলো ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার কারণে প্রিয়জনকে হারিয়েছে তারা কয়েক দশক ধরে এই সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
গোল্ডেন গেট ব্রিজ হাইওয়ে অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ডিস্ট্রিক্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘স্টিলের জাল লাগানোর উদ্দেশ্য হলো ব্রিজ থেকে লাফ দেওয়া ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংখ্যা কমানো। এটি একটি প্রমাণিত ব্যবস্থা যা লোকেদের সেতু থেকে লাফ দেওয়া থেকে বিরত রাখে। স্টিলের জাল হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের যত্ন ও আশার প্রতীক হিসাবে কাজ করে এবং প্রয়োজনে লোকেদের বেঁচে থাকার দ্বিতীয় সুযোগ দেয়।’
২০১৪ সালে সেতুটিতে স্টেইনলেস স্টিলের জাল লাগানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু তার চার বছর পরেও সেই কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সে সময় অনেকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, এই পদক্ষেপ সেতু থেকে নদীর দৃশ্য দেখাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং একইসঙ্গে এটি খুব ব্যয়বহুল পদক্ষেপ।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এই জাল ইতোমধ্যেই বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছে। প্রতি বছর গড়ে গোল্ডেন গেট ব্রিজে প্রায় ৩০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ২০২৩ সালে নেট লাগানোর কাজ চলার সময়ই সেখানে ১৪টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা আত্মহত্যার গড় সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কম।
মন্তব্য করুন