রীতা ভৌমিক
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০২:০৩ এএম
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগে ভাটা

এনজিওদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহই দায়ী
পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগে ভাটা

পথশিশুদের মধ্যে সঞ্চয়মুখী অভ্যাস গড়ে তুলতে ২০১৪ সালে দেশে প্রথমবারের মতো মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া হয়। উপার্জিত অর্থের নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই অবহেলিতদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করাই ছিল এ উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য।

শুরুতে ৫৩টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং ১৯টি ব্যাংক এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পথশিশুদের মোট ৩৭ হাজার ৭৯১টি হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাবে মোট অর্থ জমা পড়ে মাত্র ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। ব্যস—এ পর্যন্তই। এরপর আর বেশি দূর এগোনো যায়নি। কার্যক্রম শুরু হওয়ার এক দশক পার না হতেই বহুল আলোচিত আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক এ উদ্যোগে মরীচিকা ধরেছে। যদিও এর উল্টোপিঠে ইউনিসেফের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে পথশিশুর সংখ্যা এরই মধ্যে বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সংস্থাটির মতে, নানা কারণে প্রতি বছরই অভিভাবকহীন এই পথশিশুর সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে ধারাবাহিকভাবে দেশে যখন অভিভাবকহীন এই পথশিশুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে, সেই সময় তাদের সঞ্চয়ী করে তোলার উদ্যোগে ভাটা পড়ার খবর বড় ধরনের উদ্বেগের। এটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচির (এসডিজি) লক্ষ্য অনুযায়ী ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন’ চেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে, পথশিশুদের সঞ্চয়ী করার লক্ষ্যে ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ রাখার উদ্যোগটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশে একদিকে ক্রমবর্ধমান পথশিশুদের নতুন ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে গত এক দশকে যেসব ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে এবং সেসব অ্যাকাউন্টে যত অর্থ জমা পড়েছে—সঠিক তদারকির অভাবে এসব অ্যাকাউন্টের ভবিষ্যৎও চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। মূলত এনজিওগুলোর কার্যকর ভূমিকা থেকে সরে আসা এবং হিসাব খোলায় সম্পৃক্ত ব্যাংকগুলোরও এ কাজে অনীহার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, যখন পথশিশুদের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। বিশেষ করে আইনের অনেক জটিলতা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইন বিভাগের সহায়তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেষ্টায় উদ্যোগটি সফল করা গেছে। তবে শর্ত ছিল এনজিও বা কোনো সামাজিক ব্যক্তি যদি তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তাহলে ওই শিশুদের পক্ষে তারা এবং শিশুরাও ব্যাংক হিসাবে স্বাক্ষর করতে পারবে। তখন এই দায়িত্ব পালনে অপরাজেয় বাংলাদেশকে আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধ বিভাগ থেকে এটিকে উৎসাহ দেওয়া হতো। এখন সেই উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয় রেখেছে কি না সেটি আমার জানা নেই বলে দাবি করেন সাবেক এই গভর্নর।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে এ উদ্যোগটি সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে দেখতে হবে। একই ভাবে এনজিওগুলোকেও তাদের সেই আগের মনোভাব ধরে রখে গৃহীত উদ্যোগে সক্রিয় থাকতে হবে। উভয় দিক থেকেই এ ক্ষেত্রে সমন্বয় জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও সে ক্ষেত্রে নির্দেশনা আসতে হবে। তা ছাড়া এখন তো মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংও এসে গেছে। সবারই সদিচ্ছা দরকার আছে। তা না হলে এসব পথশিশু, কর্মজীবী শিশুদের উপার্জিত ও সঞ্চিত নগদ টাকা বেহাত হয়ে যেতে পারে।

সরেজমিন দেখা গেছে, এসব এনজিও এবং ব্যাংকের অধিকাংশই পথশিশুদের হিসাব খোলার বিষয়ে কাজ করছে না। বেশ কয়েকটি এনজিওর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। বিশেষ করে মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নারীমৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপণ, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, শক্তি বিদ্যালয়, ইবিসিআর প্রকল্প, পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি এনজিও—এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অপরাজেয় বাংলাদেশ এবং নারীমৈত্রী এখন আর এ বিষয়ে কোনো কাজই করছে না বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানান, এই কার্যক্রমগুলো এনজিওর কর্মসূচির ওপর নির্ভর করে। তাদের কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেলে কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে তখন করার কিছু থাকে না। এনজিওরাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।

জানতে চাইলে অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু কালবেলাকে বলেন, যিনি এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি সরকারি চাকরি পেয়েছেন। তাই প্রকল্পটি দেখার দায়িত্বে কেউ নেই।

ব্যাংকগুলোরও এ নিয়ে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই শিশুদের জন্য ব্যাংকগুলোতে শিশুবান্ধব কর্নার করার কথা থাকলেও তা আজও হয়নি। এ কারণে অনেকে ব্যাংকে যেতে ভয় পায়। বাংলাদেশ ব্যাংক কমন প্ল্যাটফর্ম থেকে বিষয়টি দেখলেও এনজিওগুলো কীভাবে এগোচ্ছে, সেটি মনিটরিং সেভাবে করছে না।

ফুলকি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২০১৬-১৭ সালে বস্তিতে বসবাসরত গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নেয়। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা মিরপুরের রূপনগর, সোবহানবাগ, কড়াইল বস্তি এলাকার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকগুলো জানায় তাদের এ ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই।

তথ্যানুযায়ী বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পথশিশুদের হিসাব খোলা হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে ৩২ হাজার ৯৯৮টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবে ৫৯ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

জানা গেছে, এই ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্দেশ্য ছিল হিসাবধারী যেসব পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, শিশুরা যেন নিজেদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারো দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮% মার্কিনি : রয়েটার্স

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাল ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১০

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

১১

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

১২

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১৩

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১৪

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১৫

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৬

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৭

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

১৮

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১৯

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

২০
X