ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে (এসআইবিএল) বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ৯ শেয়ারধারী। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক মো. রেজাউল হকসহ ৯ জন শেয়ারধারী গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ দাবির কথা জানান।
এর আগে বেসরকারি পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক।
এসআইবিএলের শেয়ারধারীরা মনে করছেন, একীভূত হলে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হবে। গভর্নর ও সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে তারা বলেছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রমে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যাংকটি সংকটজনক অবস্থায় পড়েছে। শেয়ারধারীদের দাবি, ব্যাংকটির প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের সম্মতি ছাড়াই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এ উদ্যোগ ব্যাংকটির উন্নতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
শেয়ারধারীদের দাবি, তারা ১৯৯৫ সাল থেকে ব্যাংকটির পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির উন্নতি করেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের পর ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং ব্যাংকের মূল লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে অনিয়ম ও লুটপাটের পথ অনুসরণ করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাংকটি বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে, যা জামানত ছাড়াই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সময় চুপ ছিল এবং ব্যাংকটির অপব্যবহার বন্ধ করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে চিঠিতে অভিযোগ করেন শেয়ারধারীরা।
তারা চিঠিতে আরও লিখেছেন, ২০১৭ সালের পর নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন হলেও, তা ব্যাংকটির ভঙ্গুর আর্থিক অবস্থাকে সমাধান করতে পারেনি। কিছু উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার থাকলেও তাদের পরিচালনায় আসার সুযোগ না দিয়ে একেবারে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়, যা কার্যকর ছিল না।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে শেয়ারধারীরা আরও বলেছেন, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটির প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তারা মনে করেন, এর ফলে ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা আরও কমে যাবে এবং ব্যবসা ও ব্যাংকিং পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হবে। তাদের দাবি, যদি ব্যাংকটির প্রকৃত উদ্যোক্তা এবং শেয়ারধারীরা ব্যাংকটি পরিচালনা করতেন, তবে এটি দ্রুতই আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারত এবং লাভজনক অবস্থায় ফিরে আসতে পারত।
শেয়ারধারীরা বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন যেন তারা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয় এবং ব্যাংকটির প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের হাতে ব্যাংকটির পরিচালনার দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়। তাদের দাবি, যদি তাদের এ অনুরোধে সাড়া না দেওয়া হয়, তবে ব্যাংকটি আর্থিকভাবে আরও বেশি সমস্যায় পড়বে এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে আরও সময় লাগবে। এ বিষয়টি নিয়ে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে শেয়ারধারীদের অভিযোগ ও দাবি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন