

দুই মাস ধরে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা কমেছে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মানুষ আবার ব্যাংকে টাকা জমা রাখায় আগ্রহী হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। আগের মাস জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। আর জুনে মানুষের হাতে ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুনের তুলনায় জুলাইয়ে নগদ টাকা কমেছিল ৯ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, আর জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কমেছে আরও ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই সময়ে ছাপানো টাকা বা রিজার্ভ মানিও কমেছে ৮ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত টানা বাড়ছিল মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ। ওই সময় ব্যাংক খাতে আস্থা কমে যাওয়ায় অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়িতে রাখতেন। এতে ব্যাংকগুলোতে দেখা দেয় তারল্য সংকট। উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করেও ব্যাংকগুলো তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরতে শুরু করে। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা কমতে থাকে এবং ব্যাংকে জমা বাড়তে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিস্তারিত তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্টে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। পরে মার্চে তা হঠাৎ বেড়ে হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। তবে আবার এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ অঙ্ক কমতে থাকে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ নগদ টাকা হাতে রাখত। এখন মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, ফলে সঞ্চয়ের প্রবণতা বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা ফিরছে, যা ব্যাংকে টাকা ফেরার অন্যতম কারণ।
এদিকে, নগদ টাকার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও কমেছে। জুলাইয়ে যেখানে রিজার্ভ মানি ছিল ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, আগস্টে তা নেমে এসেছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫০৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক মাসে মুদ্রা সরবরাহ কমেছে ৮ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট অনেকটা কমে যাবে এবং আমানতের সুদের হারও স্থিতিশীল থাকবে। এতে অর্থনীতির গতিও কিছুটা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন