

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে করপোরেশনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর মেয়রের আশ্বাসে তারা ফটকের গেট খুলে দেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরভবনের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পাশাপাশি তাকে অপসারণে সাতদিনের সময় বেঁধে দেন।
আন্দোলনকারীদের একজন সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, রাজস্ব খাতে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বাধাগ্রস্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি ফাইলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করেন। ওনার কারণে চট্টগ্রামে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি চান না বিএনপির মেয়রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের কোনো উন্নয়ন হোক। আমরা এরকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে এক মুহূর্তও করপোরেশনে দেখতে চাই না।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এসে আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তাদের উদ্দেশ্যে সিটি মেয়র বলেন, তৌহিদ সাহেব ২০২৩ সাল থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন। তার সময়েই রাজস্বের ফাইল ঘষামাজার এ দুর্নীতি ধরা পড়েছে। তিনি এ দুর্নীতির বিষয়ে আদ্যোপান্ত জানতেন। ২৩, ২৪ ও ২৫ সাল পর্যন্ত ওনার আধিপত্য ছিল। তিনি এ দুর্নীতির প্রতিবেদন দিতে পারেন নাই। ৮ মাস আগে যখন আমি পুনঃতদন্ত কমিটি করি, তিনি প্রধান আইন কর্মকর্তাকে কোনো তাগাদাও দেননি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যখন একটি ট্রেইনিংয়ে যান, তখন সচিবকে প্রধান নির্বাহীর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সচিব আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটা দিতে পেরেছেন। আমাকে যখন সাংবাদিক ভাইয়েরা প্রধান নির্বাহীর ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, আমি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি, কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনে থাকতে পারবে না। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, ওনি যদি ওনার শোকজের সঠিক জবাব দিতে না পারেন, যদি প্রমাণিত হয়, উনিও জড়িত ছিলেন, তাহলে ওনার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়ার তাই নেওয়া হবে।
মেয়র আরও বলেন, আরেকটি বিষয় আমাকে বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নয়নের যত ফাইল ওনার কাছে গিয়েছে, ওনি সব আটকে দিয়েছেন। এতে চট্টগ্রামের উন্নয়নও ব্যাহত হয়েছে। আমরা এসবেরও প্রমাণ পাচ্ছি। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সিটি করপোরেশনে রাখব না।
প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইসহাক ব্রাদার্স ও ইনকনট্রেন্ড ডিপোর গৃহকর নির্ধারণের জন্য বার্ষিক মূল্যায়ন ধার্য করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কিন্তু ঘষা মাজা করে ‘২’ মুছে দিয়ে যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেখানো হয়। এ ঘষামাজার কারণে সিটি করপোরেশন বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গত সোমবার সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন