চলতি অর্থবছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ষষ্ঠ এবং বর্তমান সরকারের ৯৯তম সভা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। আর এটিই হতে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের শেষ একনেক সভা। শেষ সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার ৩৬ প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। এর বাইরেও অনুমোদন পাচ্ছে ৬টি প্রকল্প।
আগামী সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর তপশিলের পর আইনি বাধা না থাকলেও রেওয়াজ হিসেবে সাধারণত একনেক সভা আর হয় না। এ হিসেবে এটা সরকারের শেষ একনেক সভা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম দৈনিক কালবেলাকে বলেন, আগামী ৯ নভেম্বর ষষ্ঠ একনেক সভা হবে। নির্বাচনের আগে আর একনেক সভা হবে কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না। তপশিল ঘোষণার পর আর সভা হবে না। তপশিল হওয়ার আগে সময় পাওয়া গেলে প্রধানমন্ত্রী করতেও পারেন । তবে মনে হচ্ছে আর হবে না। এদিকে সাধারণত মঙ্গলবার হলেও প্রথা ভেঙে এবার একনেক সভা হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নিয়মিত একনেক সভা না হওয়ায় অনেক প্রকল্প প্রস্তাব জমা হয়ে গেছে। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে তপশিল ঘোষণার কথা থাকায় একনেক হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ কারণে প্রথা ভেঙে মঙ্গলবারের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার একনেক সভা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চলতি অর্থবছরের ষষ্ঠ একনেক সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থাপনের জন্য নতুন ও সংশোধিত মিলিয়ে ৩৬টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত একনেক সভায় ৩২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক সভায় যে প্রকল্পগুলো তোলা হবে, সেগুলোর বেশিরভাগের পিইসি সভা তাড়াহুড়া করে হয়েছে। দ্রুত ডিপিপি যাচাই-বাছাই শেষে কার্যপত্র তৈরি করে পিইসি সভা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের। ফলে বেশিরভাগ প্রকল্পেই থেকে যাচ্ছে গলদ। কিছু প্রকল্পে বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদন পাচ্ছে। ফলে তাড়াহুড়া করে প্রকল্প নিতে গিয়ে সরকারের অর্থের অপচয় হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক কালবেলাকে বলেন, গত একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর কয়েকটির পিইসি সভায় সঠিকভাবে হয়নি। কয়েকটি প্রকল্পে দেওয়া পর্যবেক্ষণগুলো না মানা হলেও অনুমোদন পেয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পে নতুন করে অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে; কিন্তু সেগুলো আর যাচাই-বাছাই করা হয়নি।
একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য ৩৬ প্রকল্পের মধ্যে ২৩টি নতুন এবং ১৩টি সংশোধিত। এর বাইরে ১টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হবে। এ ছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদিত ৫টি প্রকল্প একনেক সভাকে অবহিত করা হবে। যেসব প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে তার মধ্যে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ১৬, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ৯, কৃষি ও পানিসম্পদ ও পল্লি বিভাগের ৯ এবং বাকি ২টি শিল্প ও শক্তি বিভাগের।
অনুমোদন পেতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার ও সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের। স্থানীয় সরকার বিভাগের ৮টি, সরকার ও সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগের ৬টি। এই দুই বিভাগের রয়েছে মোট ১৩টি প্রকল্প। এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ২টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২টি প্রকল্প রয়েছে।
এ ছাড়া একটি করে প্রকল্প রয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্ৰণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, সুরক্ষাসেবা বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।
পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ৩টি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি করে প্রকল্প প্রস্তাব। এ ছাড়া জননিরাপত্তা বিভাগের একটি প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর জন্য উপস্থাপন করা হবে।