বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডুরান্ড লাইন কেন সংঘাতক্ষেত্র

পাকিস্তান-আফগানিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা
ডুরান্ড লাইন কেন সংঘাতক্ষেত্র

সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের সীমানা মূলত সিন্ধু নদের মাধ্যমেই চিহ্নিত। সে হিসেবে পাকিস্তানের সীমানাও হওয়া উচিত এ নদ। কিন্তু দেশটির মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়—সিন্ধু নদ পাকিস্তানের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। মানে দেশটির সীমান্ত সিন্ধু পেরিয়ে আরও পশ্চিমে প্রসারিত। তাহলে এ বর্ধিত এলাকা কীভাবে পাকিস্তান অর্জন করল? আফগানিস্তান-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের ইতিহাস মূলত এখান থেকেই শুরু।

পেছনে দেখা: ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটিশদের অধীনে। অন্যদিকে ব্রিটিশদের তৎকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াও সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের কাছে এসে হাজির হয়। ব্রিটিশরা মূলত সমুদ্রপথের মাধ্যমে ভারতবর্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। অন্যদিকে রাশিয়া সবসময় স্থলপথেই শক্তি বৃদ্ধি করে প্রভাব তৈরিতে মনোযোগী ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় রুশ বাহিনী ককেশাস, মধ্য এশিয়া পাড়ি দিয়ে চোখ রেখেছিল আফগানিস্তানের দিকে। এতে শঙ্কিত ব্রিটিশ ১৮৪০ এর দশকে আফগানিস্তান আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়। এদিকে এরই মধ্যে রুশ সাম্রাজ্য পৌঁছে যায় আফগানিস্তানের দোরগোড়ায়। ১৮৮০-এর দশকে ব্রিটিশরা ফের হামলা চালায় আফগানিস্তানে। এবার অদম্য আফগানরা সীমিত আকারে পরাজিত হয়। যুদ্ধ শেষে সমুদ্র সংলগ্ন আফগানিস্তানের অংশ এবং সিন্ধু নদের তীরবর্তী অংশগুলো ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়। যার ফলে পশতুন অঞ্চলও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ ভারত এবং আফগানিস্তানের মাঝে। ভারতবর্ষের সীমানা গিয়ে সিন্ধু নদ থেকে প্রসারিত হয়ে তৈরি হয় ডুরান্ড লাইন।

ব্রিটিশ অফিসার ডুরান্ডের আফগানিস্তান ও ভারতবর্ষের মাঝে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ টানা লাইনটিই চিহ্নিত হয় তাদের চূড়ান্ত সীমানা হিসেবে। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ রাজ ও তৎকালীন আফগান আমিরের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির মাধ্যমে তা কার্যকর হয়। কিন্তু ১৯২০-এর দশকে তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে জয়লাভের পর আফগানিস্তান সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর তখন থেকেই দেশটি বারেবার তার হারানো ভূখণ্ডের ওপর দাবি জানিয়ে এসেছে।

১৯৪৭ সালে সৃষ্ট পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের দুটি সেই হিসেবে ডুরান্ড লাইনের সৌজন্যে পাওয়া। সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশ নিয়ে আফগানিস্তানের কোনো দাবি না থাকলেও বেলুচিস্তান এবং খায়বার পাখতুনখোয়া (পূর্বের নাম উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ) এখনো নিজেদের অংশ মনে করে তারা। এ কারণেই তারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের বিরোধিতা করেছিল।

ভাগ হয়েছে পশতুন এলাকা: পশতুন জাতিগোষ্ঠীকে দুভাগে বিভক্ত করেছে এ কৃত্রিম লাইন। অথচ পশতুনদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভেদ। পেশোয়ার, খাইবার, সোয়াত, চিত্রাল, ওয়ারিজিস্তানের মতো আজন্ম পশতুন ভূমিকে আফগানিস্তান থেকে কেড়ে নিয়েছে এ ডুরান্ড লাইন।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঠেকাতে না পারলেও ডুরাল্ড লাইনে বিভক্ত পশতুন জাতির বিদ্রোহীদের সবসময় মদদ দিয়ে এসেছে আফগানিস্তানের সরকারগুলো। পশতুনরা চাইতেন পাকিস্তানের পশতুন অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল নিয়ে আলাদা পশতুনিস্তান (পাখতুনিস্তান) গঠন করতে, যা একসময়ে আফগানিস্তানে যোগ দেবে এ আশায় কাবুল তাদের সহায়তা করত। বিষয়টি নিয়ে কখনোই সুরাহা হয়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্র সবসময় চেয়ে এসেছে, ডুরাল্ড লাইনের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য।

এজন্য ৬০ এর দশকে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক একদম তলানিতে পৌঁছে। বারবার রক্তাক্ত হয়েছে এ সীমান্ত। তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। তবে এখনো এর সমাধান হয়নি।

পশতুনরা কী চান: জাতিগতভাবে বিশ্বের ২৬তম জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত পশতুন সম্প্রদায়। আফগানিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায় হলো তারা। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ হলো এ পশতুনরা। পশতুন জাতিগোষ্ঠী পাঠান নামেও পরিচিত। আফগানিস্তানে পশতুনরা ক্ষমতার মূল অংশীদার হলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবিদের টপকিয়ে পশতুনদের আধিপত্য বিস্তার সম্ভব হয়নি। আর তাই পাকিস্তানে বসবাসরত পশতুনদের একটা অংশ চান, ডুরান্ড লাইন মুছে ফেলে সম্পূর্ণ পশতুন অধ্যুষিত এলাকাকে আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা। তাদের একটি উপশাখা হলো টিটিপি। ২০২১ সালে তালেবান কাবুলে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীই পাকিস্তান বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে, যা নিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দফায় দফায় হামলা হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২ টন ইলিশসহ ৪৬ জেলে আটক

আ.লীগের ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা, ককটেল বিস্ফোরণ

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে রেস্টুরেন্টে কিশোরীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

সালমান শাহ হত্যা মামলা, নতুন আসামি হলেন যারা

ভারতকে এশিয়া কাপের ট্রফি কবে দেওয়া হবে, জানাল এসিসি

একনেকে ১৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড

দেয়ালের উপর পড়ে ছিল বস্তায় মোড়ানো নবজাতক

জোবায়েদ হত্যা : ৩ আসামির জবানবন্দির জন্য আবেদন

১০

এবার দীঘির সঙ্গে জুটি বাঁধছেন বাপ্পারাজ

১১

জোবায়েদের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আদালতপাড়ায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ

১২

শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের

১৩

ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার এমন কিছু করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৪

তৃতীয়বার কন্যাসন্তান হওয়ায় মায়ের কাণ্ড

১৫

বড়পুকুরিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ / ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ৮ জেলা

১৬

মুন্সীগঞ্জে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১৭

৪০ শিক্ষক মিলেও পাস করাতে পারলেন না ২১ জন পরীক্ষার্থীকে

১৮

উইকেট ‘উপহার’ দিলেন শান্ত, ৩ উইকেট হারাল বাংলাদেশ

১৯

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে স্বর্ণের ‘দুবাই ড্রেস’ 

২০
X