বেলারুশের প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপে ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ থামার বিষয়টি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি অপমানজনক বিষয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ওয়ার (আইএসডব্লিউ)। কারণ প্রেসিডেন্ট পুতিন বিদ্রোহ থামানোর নির্দেশ দিলেও প্রিগোজিন তার কথা শোনেননি। সংস্থাটি তাদের পর্যবেক্ষণে এ বিদ্রোহ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় জানিয়েছে। এতে তারা বলেছে, ওয়াগনারের বিদ্রোহ দমনে সমন্বিত র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স প্রস্তুতে হিমশিম খেয়েছে রাশিয়া। খবর আলজাজিরার।
সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ এক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন বিদ্রোহ থামাতে সম্মত হন। শনিবার (২৪ জুন) ২৫ হাজার সেনা নিয়ে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার রোস্তোভ প্রদেশে প্রবেশ করেন প্রিগোজিন। এরপর নিজেদের সেনাদের রাজধানী মস্কো অভিমুখে পাঠান। তবে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপে বিদ্রোহ থামার বিষয়টি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি অপমানজনক বিষয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএসডব্লিউ। এ ছাড়া লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে ওয়াগনার প্রধানের যে চুক্তি হয়েছে, সেটির মাধ্যমে ওয়াগনার আর স্বাধীন বাহিনী থাকবে না। এর নিয়ন্ত্রণও আর প্রিগোজিনের কাছে থাকবে না। সংস্থাটি তাদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেছে, ওয়াগনারের বিদ্রোহের কারণে রাশিয়ান সরকার ‘গভীর অস্থিতিশীল’ পরিস্থিতিতে পড়েছিল। এ ছাড়া প্রিগোজিনের এ বিদ্রোহ রুশ প্রেসিডেন্ট দপ্তর ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়েছে। এমনকি প্রিগোজিন যদি চাইতেন তাহলে তার সেনারা মস্কো পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারত। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ওয়াগনার প্রধান যে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন, তা আগে থেকেই জানতেন মার্কিন গোয়েন্দারা। এ ছাড়া তাদের বিশ্বাস, বিদ্রোহ শুরুর অন্তত এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছিল।
‘পুতিন বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করেন না’ : মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের মস্কোর সাবেক ব্যুরোপ্রধান জিল ডগার্টি বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করেন না। তার চরিত্র অন্তত সেটা বলে না। রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে ডগার্টি শনিবার সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপারকে এ কথা বলেন।
প্রিগোজিন বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার বাহিনী নিয়ে ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেন। পরে বেলারুশের মধ্যস্থতায় তিনি এ যাত্রা বন্ধ করেন। মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিন এখন বেলারুশ যাবেন। বিদ্রোহের কারণে তার বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা হবে। সিএনএনের মস্কোর সাবেক ব্যুরোপ্রধান বলেন, ক্রেমলিনের ভাষ্যমতে, প্রিগোজিনকে বেলারুশে যেতে বলেছেন পুতিন। তবে ওয়াগনারপ্রধান বিশ্বাসঘাতকই রয়ে গেছেন। জিল ডগার্টি বলেন, ‘আমি মনে করি, পুতিন কখনোই এটি (বিশ্বাসঘাতকতা) ক্ষমা করবেন না।’ তার মতে, পুতিনের জন্য প্রিগোজিন একটি হুমকি, তা তিনি যেখানেই থাকুন না কেন।
উল্লেখ্য, প্রিগোজিনের বিদ্রোহের জেরে পুতিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন, যা কিছু ঘটছে, তা বিশ্বাসঘাতকতা। এটি রুশ জনগণের পিঠে ছুরি চালানোর শামিল। সশস্ত্র বিদ্রোহের পেছনে থাকা ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি।
মন্তব্য করুন