বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মতো অসহনীয় গরমে পুড়ছে রাজধানী বেইজিংসহ প্রায় পুরো চীন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চল বাদে বেশিরভাগ অঞ্চলের মাঠ খরায় চৌচির হয়ে পড়েছে। এতে করে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন দেশটির চাষিরা। এরকম পরিস্থিতিতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা। গত বুধবার ‘ইনসাইডওভার’ প্রকাশনায় কলামিস্ট ফেডেরিকো গিউলিয়ানি এ কথা বলেন। খবর রয়টার্সের।
ইনসাইডওভার অনুসারে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পিয়ার-রিভিউ করা একাডেমিক জার্নাল নেচার ফুড বলেছে, চীনের চরম আবহাওয়ার কারণে গত দুই দশকে দেশটিতে মোট ধানের ফলনের এক-দ্বাদশ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক ও অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘোষণা করেছে, এল নিনোর প্রভাব ৮ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে ও উত্তর গোলার্ধের শীতকালে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে পারে, যা আগামী বছর পর্যন্ত প্রসারিত হবে। এমনকি মে মাসের শেষ সপ্তাহে, চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ সতর্ক করেছিল, দেশটির উত্তর-পূর্ব ও উত্তর অংশে দেশের শীর্ষ ফসল উৎপাদনকারী প্রদেশগুলোতে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এদিকে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইউনান ক্রমাগত খরার সম্মুখীন হচ্ছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি চীনের ন্যাশনাল ক্লাইমেট সেন্টার (এনসিসি) রোববার ঘোষণা করে, দেশটি গত ছয় দশকের মধ্যে চলতি বছর সর্বোচ্চসংখ্যক গরমের দিন রেকর্ড করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে একাধিক তাপপ্রবাহের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। গ্লোবাল টাইমসের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চীন এ বছর গড়ে ৪ দশমিক ১ দিন রেকর্ড করেছে যেখানে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। ১৯৬১ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে জাতীয় দুর্যোগ হ্রাস কমিটির কার্যালয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জলসম্পদ, কৃষি ও গ্রামীণবিষয়ক মন্ত্রণালয়, চীন আবহাওয়া প্রশাসন, রাজ্য বনায়ন এবং তৃণভূমি প্রশাসনের প্রতিবেদন মতে, এল নিনোর কারণে এবার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে চীনের খাদ্য নিরাপত্তা।
গরমে বেইজিংয়ে বাইরে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ
এদিকে অসহনীয় গরমে পুড়ছে চীনের রাজধানী বেইজিং। টানা কয়েক দিনের তীব্র রোদে বেড়েছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি। আর সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যগত দিকটি চিন্তা করে, দেশটির সরকার বেইজিংয়ে ঘরের বাইরের সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। এদিন রাজধানীর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই হয়।
বয়স্ক এবং অসুস্থরা যেন শীতল থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অতি তাপমাত্রার কারণে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের শহর বেইজিংয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
গত সোমবার এক সরকারি তথ্যে জানানো হয়, বেইজিংয়ে টানা ১০ দিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর ছিল। ১৯৬১ সালের পর যা সর্বোচ্চ। বাইরে কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে ও সাধারণ মানুষকে শীতল রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ‘বাইরে সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখুন।’
এদিকে রাজধানী বেইজিং তাপের আগুনে পুড়লেও, দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশটির উত্তর দিকের ইনার মঙ্গোলিয়ায়, উত্তর-পূর্ব দিকের হেইলংজিয়াং ও তিব্বতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকের সিচুয়ানে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন