আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় আকারের ব্যানার-ফ্যাস্টুন সরিয়ে ফেলায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি আটকে তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৬ জনু) রাত পৌনে ৮টার দিকে নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বহরমপুর ডাসপুকুর এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটায়। পরে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে থাকা জব্দ করা ব্যানার-ফেস্টুনও ছিনিয়ে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নগরজুড়ে নৌকার মেয়র প্রার্থী লিটনের সাঁটানো ব্যানার-ফেস্টুনগুলো নির্ধারিত মাপের চেয়ে আকারে অনেক বড় ছিল-এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি নির্বাচনে দায়িত্বরত ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক ও জেলার নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মো. শামীম আহমেদ। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় ব্যানার-ফেস্টুনগুলো সরিয়ে ফেলার কাজ করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসানের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর বহরমপুর ডাসপুকুর এলাকায় বিধিসম্মত নয় এমন ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণে কাজ করছিলেন। কিছু ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করে তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতেও তোলা হয়। এ সময় নৌকার সমর্থকরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়িটি আটকে দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে যান রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার ও মেয়র প্রার্থী লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু। তারাও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে রাগান্বিত স্বরে কথা বলেন ও চড়াও হন। এ সময় দায়িত্ব পালনকালে (ঘটনার ভিডিও ধারণকালে) দৈনিক কালবেলার রাজশাহী ব্যুরো প্রধানের ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ধারণ বন্ধ করে দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার। পরে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে রাখা অপসারণকৃত অবৈধ ব্যানারগুলোও ছিনিয়ে নেন।
দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সবুজ হাসানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে মেয়র প্রার্থী লিটনের নির্বাচনী প্রচার কমিটির (মিডিয়া) প্রধান ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু কালবেলাকে বলেন, সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটকে কোনো ধরনের লাঞ্ছিত করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার পায়ের নিচে রাখার কারণে উত্তেজিত কিছু নেতাকর্মী সেগুলো সরিয়ে রাখতে অনুরোধ করেন। তিনি কালবেলা ব্যুরো প্রধানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর প্রচার পোস্টার নির্ধারিত মাপের বাইরে সাঁটানোর অভিযোগে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।
রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করছে। কোনো অসংগতি চোখে পড়লে জেলা প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নেবে, এটিই স্বাভাবিক।
মন্তব্য করুন