বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং ভারতের উজান থেকে আসা পানির ঢল কিছুটা কমায় উত্তরে নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে তিস্তা ও যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ছুঁইছুঁই করছে বিপৎসীমা। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বসতভিটা ছেড়ে অন্য স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যাকবলিতরা। নদী তীরবর্তী হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তীব্র আকার ধারণ করেছে নদীভাঙন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৩ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৫ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরও দু-এক দিন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপৎসীমা অতিক্রমও করতে পারে। তবে ভারি বন্যার আশঙ্কা নেই। দুদিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।
লালমনিরহাট: উজানের ঢল ও বর্ষণে আবারও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে গত চার দিন থেকে নিম্নাঞ্চলের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। কমেনি ভোগান্তি। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বেড়ে বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এর আগে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গত চার দিন থেকে তিস্তা চর এলাকা ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কম আসায় দ্রুত পানি কমতে শুরু করলেও সোমবার দুপুর থেকে আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আবারও প্লাবিত হবে নতুন নতুন এলাকা।
কুড়িগ্রাম: ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে চতুর্থ দফা বন্যার পর পানি নেমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার উলিপুরে বন্যার পানি কমলেও তিস্তার ভাঙনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তীরবর্তী মানুষ। এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও উজানি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত দলদলিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার, অর্জুন, লালমসজিদ, ভেন্ডার পাড়া, কুমার পাড়া, ফকির পাড়া ও শেখের খামার এলাকার ভাঙন কবলিত মানুষরা। এসব এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাপাত করছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নদীভাঙন এলাকায় আমরা জিও ব্যাগ ফেলে এবং প্রয়োজনীয় মালপত্রসহ সার্বক্ষণিক নদীভাঙন রোধে কাজ করে যাচ্ছি।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত হয়েছে একটি সেতুর নির্মাণাধীন বিকল্প সড়ক। এতে দুই ইউনিয়নের ১২ গ্রামের মানুষ, ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
জানা গেছে, এক মাস আগে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সড়ক ভেঙে একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবছার কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার এনামুল হক সরকার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো কারও হাত থাকে না। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প সড়কটি ভেঙে যায়। পানি প্রবাহ কমলে সড়কটি সংস্কার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে এই সেতুর বিকল্প সড়ক পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প সড়ক সংস্কারসহ সেতুর কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন