মরা তিস্তা নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকোই চার গ্রামের মানুষের চলাচলের পথ। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বছরের পর বছর এ সাঁকো দিয়েই চলাচল করে। স্থানীয়দের চাঁদার টাকায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পৌরসভা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করে গ্রামের মানুষ। এমনকি কৃষিপণ্য পরিবহনে কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, হারাগাছে গোল্ডেনের ঘাট এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটারের মরা তিস্তা নদীর ওপর এ বাঁশের সাঁকো রয়েছে। সাঁকোর ওপর দিয়ে রাজপুর ইউপির চিনাতুলি, প্রেমের বাজার, খুনিয়াগাছ ইউপির তালপট্টি, হরিণ চড়া, মিলন বাজার, টঙ্গী বাজার, হারাগাছ পৌরসভার চরচতুরা, ধুমগারা, পল্লীমারি গ্রামের মানুষজন প্রতিদিনই যাতায়াত করছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ২০১৩ সালের আগে মানুষ বন্যা এবং পানি মৌসুমে নৌকা দিয়ে পারাপার হতো। শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে, মোটরসাইকেল, সাইকেলে পার হতো এবং কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করত। ২০১৩ সালে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে। প্রতিবছর দুই পাড়ের লোকজন টাকা তুলে সাঁকোটি মেরামতও করে। সেই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করা গেলেও জনগণের দুর্ভোগ কমছে না।
মরা তিস্তা নদীর ওই পাড়ে পল্লীমারি উচ্চ বিদ্যালয়, চরচতুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাংচর ভাঙ্গীটারি বেসরকারি বিদ্যালয়, ইউএনএ বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাদ্রাসা ও পাঁচটি ছোট-বড় বাজার রয়েছে। প্রতিদিনই বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, ‘ভোটের আগে সবাই পুল দিবের চায়, কেউ কথা রাখে না। ভোটও শ্যাষ, পুলও শ্যাষ। গেল ত্রিশ বছর ধরি এমন কাণ্ড দেখোছি। ঝরির দিন যখন মেলা পানি হয় তখন এ পুল দিয়ে মানুষ চলাচলের অসুবিধা হয়া যায়। তখন ওইদিকের মানুষরা যাইতে ভয় করে। সন্ধ্যার পর সাইকেল বা মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না।’
মমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক দিন পরপর ব্রিজ মেরামত করা হয়, মেরামতের জন্য প্রতি সোম ও শুক্রবার হাটের দিনে যে যেমন পারে টাকা দেয়। এভাবে সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ওঠে, সেই টাকা দিয়ে ধীরে ধীরে মেরামত করা হয়।
দরোদি স্কুলের ছাত্র আশিকুর রহমান বলে, আমরা ব্রিজের ওই পাশ থেকে আসি, যখন বর্ষা হয় তখন আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হয়ে যায়। আমরা ছাত্ররা তো আসতে পারি কিন্তু ছাত্রীরা আসতে পারে না। ব্রিজটা যদি ভালো হতো তাহলে আমাদের স্কুল যেতে সুবিধা হতো।
কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নিয়ে এলজিইডিসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো সাড়া পাইনি। আমি চেষ্টা করছি। কারণ মানুষষের অনেক দুর্ভোগ হচ্ছে।
হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হক বলেন, গোল্ডেনের ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে যাব। আমি চেষ্টা করব আমার সময়ে যেন ব্রিজটা হয়।
মন্তব্য করুন