দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমছে আশঙ্কাজনক হারে। তিন বছর ধরে রপ্তানি ক্রমাগত কমে যাওয়ায় লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা। এদিকে রপ্তানি আয় বাড়াতে ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হিমায়িত চিংড়ি ব্যবসায়ীদের মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭১ টন। এ থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৩১৬ টনে। এ থেকে আয় হয় ২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। আর প্রথম প্রান্তিকে (জুন থেকে ডিসেম্বর) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু এই সময়ে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ২৩২টি। এগুলোর আয়তন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫২০ হেক্টর। এ অঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক ২৬টি কারখানায় কর্মরত আছেন কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। এ ছাড়া এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন কয়েক লাখ মানুষ। রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারাও। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপজুড়েই কিছুটা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সে কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের চাহিদা এবং মূল্য কমে গেছে। যুদ্ধ শুরুর পরই ওই সব দেশ থেকে অর্ডার আসা কমে গেছে।
তিনি বলেন, এ দেশ থেকে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। রাশিয়া ও ইউক্রেনেও মাছ রপ্তানি হয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ দুই দেশে রপ্তানি হচ্ছে আগের তুলনায় ৩ ভাগের ১ ভাগ। ইউরোপের দেশগুলোতে চিংড়ির মূল্য ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। রপ্তানি আয় বাড়াতে ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হিমায়িত চিংড়ি ব্যবসায়ীদের মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ব্রাইট ও মডার্ন সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রেজাউল হক কালবেলাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও মূল্য কমে যাওয়ায় রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। বিদেশের ক্রেতারা মূল্য পরিশোধেও দেরি করছেন। কারণ, ক্রেতারা যেখানে চিংড়ি বিক্রি করছেন, সেখান থেকে সময়মতো মূল্য পাচ্ছেন না।
প্রিমিয়াম সি ফুডসের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আবদুল কাদের বলেন, দেশে চিংড়ির সংকট রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে চাহিদা ও মূল্য আগের তুলনায় কম।