নারায়ণগঞ্জে গত ১৫ মাসে ডাকাতির ঘটনা ও ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৫৫০ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ১০৫টি মামলা হয়েছে। তবুও থেমে নেই ডাকাতির ঘটনা। অবশেষে গণপিটুনিতে ডাকাত নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ডাকাতির ঘটনা হ্রাস করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সাল ও ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত মোট ২৮টি ডাকাতির ঘটনায় ২৮টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে ৯৯ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। ২৮টি ডাকাতির ঘটনায় মোট ২৪টি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও লুণ্ঠিত বিভিন্ন মালপত্র উদ্ধার করা হয়। বাকি ৪টি ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ডাকাতির কোনো ঘটনা এবং মামলাও নেই। ফতুল্লা মডেল থানায় ৩টি ডাকাতির মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার, বন্দর থানায় ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ জন, সোনারগাঁ থানায় ৭টি মামলায় গ্রেপ্তার ২৯ জন, রূপগঞ্জ থানায় ৫টি মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ জন, আড়াইহাজার থানায় ৭টি মামলায় গ্রেপ্তার ৩৩ জন। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৭৭টি ঘটনায় ডাকাতদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সেই তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ২০২৩ সাল ও ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৭৭টি ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় ৭৭টি মামলায় ৪৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সদর মডেল থানায় ৯টি ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় ৯টি মামলায় মোট গ্রেপ্তার ৪৯ জন, ফতুল্লা মডেল থানায় ১৮টি ডাকাতি প্রস্তুতির ঘটনায় ১৮টি মামলায় গ্রেপ্তার ৯৬ জন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৮টি ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় ৮টি মামলায় মোট গ্রেপ্তার ৬২ জন, রূপগঞ্জ থানায় ১৫টি ডাকাতিচেষ্টার ঘটনায় ১৫টি মামলায় গ্রেপ্তার ৯৪ জন, আড়াইহাজার থানায় ১০টি ডাকাতিচেষ্টার ঘটনায় ১০টি মামলায় গ্রেপ্তার ৫২ জন ও সোনারগাঁ থানায় ১০টি ডাকাতিচেষ্টার ঘটনায় ১০টি মামলায় মোট গ্রেপ্তার ৫৬ জন।
এদিকে গত ১৭ মার্চ রাতে সোনারগাঁয়ে মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনিতে চারজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়। পরে আহত ডাকাতের জবানবন্দি নেওয়া হলে, ডাকাতির পরিকল্পনার কথা বেরিয়ে আসে।
নিহতরা হলো সোনারগাঁ উপজেলার রাজাপুর শেখেরহাট গ্রামের আমান উল্লাহর ছেলে জাকির হোসেন (৩৬), তার নামে ৭টি মামলা রয়েছে। আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের শামসুল হকের ছেলে আব্দুর রহিম (৪৮), তার বিরুদ্ধেও ৭টি মামলা রয়েছে। একই উপজেলার জালাকান্দী গ্রামের মজিদ হোসেনের ছেলে নবী হোসেন (৩৫), তার বিরুদ্ধে একটি মামলা এবং একই উপজেলার মর্দাসাদী গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শের আলীর বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। আহত মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। তারা ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।
এর আগে ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর আড়াইহাজারে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে ৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। ২০২২ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা টোল প্লাজায় এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার গাড়িচালককে কুপিয়ে টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাংকের কার্ড নিয়ে গেছে একদল ডাকাত।
ডাকাত আতঙ্কে আতঙ্কিত গ্রামবাসী। সোনারগাঁ বাঘরী এলাকার গ্রামবাসী সামছুল আলম বলেন, প্রায়ই এই গ্রামে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। মানুষের সর্বস্ব লুট করে ডাকাতরা নিঃস্ব করে চলে যায়। আমরা রাতে আতঙ্কে থাকি। ডাকাতি কমাতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।
আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী এলাকার তানভীর বলেন, আড়াইহাজার ডাকাতের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। আমরা ডাকাতের ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা হঠাৎ করে এসে আক্রমণ চালায়। বাধা দিলে নির্যাতন করে। আমরা এই ডাকাত আতঙ্ক থেকে প্রতিকার চাই।
এ বিষয়ে সরকারি তোলারাম কলেজের উপাধ্যক্ষ জীবন কৃষ্ণ মোদক বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ডাকাতি বেড়েই চলেছে। এটি প্রতিকার করতে হলে আইনশৃঙ্খলার কঠোরতা বাড়াতে হবে এবং গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা নিরসনে হাইওয়েসহ বিভিন্ন স্থানে রাত-দিন প্যাট্রল টিম থাকে। এর পরও যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তাৎক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর পরও বিচ্ছিন্ন দু-একটা ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার সংখ্যা আরও হ্রাস করার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। মার্কেটগুলোতে পাহারাদার নিয়োগ করার কথা বলেছি, হাইওয়ে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে বলেছি।