কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০২:৪৪ এএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কোটার বিকল্প নেই

আল মামুন সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কোটার বিকল্প নেই

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারিসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। তাদের সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে কালবেলার মুখোমুখি হয়েছেন কোটা পুনর্বহাল চাওয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি জাফর আলী।

কালবেলা: উচ্চ আদালতের দেওয়া ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিলের রায়কে কীভাবে দেখছেন?

আল মামুন: হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়কে এদেশের তরুণ সমাজ স্বাগত জানিয়েছে। এই বিজয় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিজয়। প্রশাসনে জামায়াত-শিবিরের প্রবেশ বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির অবৈধ ও অযৌক্তিক দাবির কারণে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সংবিধান পরিপন্থি একটি পরিপত্র জারি করেছিল। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী সব শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। কালবেলা: বর্তমানে দেশব্যাপী কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আল মামুন: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কোনো বিষয়ে আন্দোলন করার অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের বংশধররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে যাচ্ছে। শিগগির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এদের ফেসবুক আইডি লিংকসহ ডিটেইলস হস্তান্তর করা হবে। প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাব। কারণ, যারা আন্দোলনের নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করে, তারা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। এদের অবমাননা ও কটূক্তি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের’ মতো নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

কালবেলা: যারা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, তাদের ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

আল মামুন: বর্তমান কোটা বাতিলের আন্দোলন অযৌক্তিক ও আদালত অবমাননার শামিল। বিচার বিভাগকে অবমাননা করে সংবিধান পরিপন্থি দাবি আদায়ের অপচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা আন্দোলনের নামে ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের গেটে গিয়ে হাইকোর্টকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিয়ে আদালত অবমাননা করেছে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুজব সৃষ্টিকারী ও ঢাবির ভিসির বাসায় হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আজ পর্যন্ত বিচার করা হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি। অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে ভিসির বাসায় হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কোটা কখনো বৈষম্য তৈরি করে না, বরং কোটা ব্যবস্থা রাষ্ট্রে বৈষম্য দূর করে সমতা নিশ্চিত করে। নারী ও জেলা কোটার কারণে রাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক কোটা সুবিধার আওতায় পড়েন। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোটা পুনর্বহালের কোনো বিকল্প নেই।

কালবেলা: মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধায় নাতি-নাতনিদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে, এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

আল মামুন: ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার স্বপ্ন দেখল ভালোভাবে বেঁচে থাকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি যখন ক্ষমতায় এলেন, ততদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে গেছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় থাকার কারণে দীর্ঘ ২১ বছর এই কোটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কাজে আসেনি। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স শেষ, তখন তিনি ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা তাদের সন্তান পর্যন্ত বর্ধিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি বারবার লক্ষ করছিলেন, স্বাধীনতাবিরোধী আমলাদের ষড়যন্ত্রের কারণে সুকৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে নেওয়া হচ্ছে না। কারণ ১৯৭৫-৯৬ সালের মাঝে নিয়োগকৃত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আমলারা ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের বংশধর আমলারা সুকৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যাচ্ছে না বলে পদগুলো শূন্য দেখানো শুরু করে। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ৫ বছর চাকরিপ্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নিয়োগবঞ্চিত হয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা অবস্থায় আবার দুই বছর নিয়োগবঞ্চিত হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখার কারণে সন্তানদেরও চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে চলে গেছে। এ কারণে নাতি-নাতনি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো প্রজন্ম পর্যন্ত কোটা সুবিধা বর্ধিত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য।

কালবেলা: এই মুহূর্তে আপনাদের কোনো কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা আছে কি?

আল মামুন: আমাদের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে সরকার কোনো টালবাহনা করলে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আবার মাঠে নামবে। প্রয়োজনে সমগ্র দেশে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিলের রায় দ্রুত কার্যকর করে বঙ্গবন্ধুর উপহার মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা সবাই মেধাবী, কেউ অমেধাবী নয়। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোটা প্রয়োগ হওয়ার কারণে বৈষম্যমূলক মেধা শব্দ পরিবর্তন করে সাধারণ শব্দ সংযোজনপূর্বক সাধারণ প্রার্থী নামকরণ করে সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এসব দাবি আদায়ে শিগগির আমরা সমগ্র দেশে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

কালবেলা: আপনাদের দৃষ্টিতে কোন কোন কোটা রাখা উচিত এবং কেন?

আল মামুন: জেলা কোটার কারণে পিছিয়ে পড়া জেলার ছেলেমেয়েরা বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরিতে প্রত্যাশিত ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। নারী কোটার কারণে নারীরা বিসিএসে প্রত্যাশিত ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। আজকে নারীরা সচিব পর্যন্ত হতে পেরেছেন। সুতরাং বৈষম্য দূর করে রাষ্ট্রে সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি সব কোটা পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদেরও কোটা সুবিধায় আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

কালবেলা: উচ্চ আদালতে ৫ জুনের রায়ের বিপরীতে কোনো রায় হলে আপনাদের ভূমিকা কী হবে?

আল মামুন: আদালতের রায়ের প্রতি আমরা সবসময় শ্রদ্ধাশীল। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপহার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখবেন এবং ন্যায় বিচারের প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বঞ্চিত করবেন না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার হাজার সন্তান এখনো বেকার জীবনযাপন করছেন। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনো অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। দেশ স্বাধীনের পর অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাড়িতে ফিরে দেখেছেন তাদের বাড়িঘর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

কালবেলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

আল মামুন: আপনাকে ও কালবেলার পাঠককেও ধন্যবাদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ

বৃহস্পতিবার প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা

ভারতে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া, বড় ধাক্কায় আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট

পদক্ষেপ নিলে মনে হয় দেশেই থাকা হবে না : ডিসি মাসুদ

১০

রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভা

১১

ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১–এর কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি

১২

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য: উপদেষ্টা

১৩

কনভেনশন হলে গেরিলা বৈঠকে গ্রেপ্তার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে

১৪

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

১৫

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

১৬

বিএনপি নেতাকে কোপাল যুবলীগ নেতা

১৭

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারী বিমানবন্দর

১৮

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৯

ডাকসু নির্বাচন / ১৩২ শিক্ষার্থীকে খাওয়ালেন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন

২০
X