কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০২:৪৪ এএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার

আন্দোলন সফল করতে হবে, না হয় দেশ ছাড়তে হবে

নাহিদ ইসলাম, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা
আন্দোলন সফল করতে হবে, না হয় দেশ ছাড়তে হবে

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’-এর ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছেন কোটাবিরোধীরা। তারা বলছেন, দাবি আদায় না হলে সারা দেশে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কালবেলার মুখোমুখি হয়েছেন কোটাবিরোধী নেতা নাহিদ ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি জাফর আলী।

কালবেলা: ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিলের রায় হলো। এখন নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন?

নাহিদ ইসলাম: কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের সরকারের জারিকৃত পরিপত্রটি গত ৫ জুন বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আমরা মনে করি, হাইকোর্টের এই রায়ে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এটা নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত ছিল, যেখানে আদালতের হস্তক্ষেপ করারই কথা ছিল না। আমরা আশা করেছিলাম, জনমত বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট এ ব্যাপারে রায় দেবেন। নির্বাহী বিভাগের পরিপত্র বিচার বিভাগ বাতিল করেছে, এতে দুই বিভাগের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে। এটা আমাদের কাছে এক ধরনের প্রহসন মনে হচ্ছে। আমরা আশা করব, দুই বিভাগের এ ধরনের সমন্বয়হীনতা দূর করে শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় এনে সুষ্ঠু এবং যৌক্তিক একটা সমাধানে আসা।

কালবেলা: এই মুহূর্তে আপনারা আসলে কী চাচ্ছেন?

নাহিদ ইসলাম: আমাদের প্রথম দাবি ছিল ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখা। কিন্তু এটা এখন আদালতের ইস্যু বানানো হচ্ছে। আমরা চাই, নির্বাহী বিভাগ নতুন করে একটি পরিপত্র জারি করুক। সেই পরিপত্র হোক সব গ্রেডের কোটাবৈষম্য নিরসন করে এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রেখে যৌক্তিক সমাধানের মাধ্যমে। এ ছাড়া নির্ভরযোগ্য একটা কমিশন গঠন করে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া হোক। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল থাকুক।

কালবেলা: কোটা নিয়ে সরকার, ছাত্রলীগ এবং অন্য সব ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?

নাহিদ ইসলাম: ২০১৮ সালের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই সমঝোতার মাধ্যমে সরকার পরিপত্র জারি করেছিল। সেই পরিপত্র হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে যখন বাতিল করা হলো, তখন সরকারের উচিত ছিল এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করা নয়, বরং সরকারের পক্ষ থেকে এবং রাজনৈতিকভাবে আমরা একটা তৎপরতা দেখতে চেয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরা গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকার দায় এড়িয়ে যাচ্ছে, কোনো সমাধানের পথ দেখাচ্ছে না। আমরা মনে করি, সরকার একটা দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সরাসরি কোটার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু না বললেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে তাদের অনুসারীরা কোটার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য নিজেদের কর্মসূচি রেখেছে। আমাদের আন্দোলনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সমর্থন জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও জানাবে বলে আশা করি। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক এই ভেবে যে, এটা একটা যৌক্তিক আন্দোলন। আমরা একটা স্বতন্ত্র জায়গা থেকে স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এটার সঙ্গে কোনো ছাত্র সংগঠনের একান্ত যোগসাজশ নেই। দলমত নির্বিশেষে এটা একটা ওপেন প্ল্যাটফর্ম। আন্দোলনে বাধা দিলে সেটা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, ২০১৮ সালের সেই অভিজ্ঞতা সরকারের রয়েছে। সেজন্য সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, অতীতের সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের বাধাগ্রস্ত না করে একটা যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করুক।

কালবেলা: আন্দোলনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন, সর্বসাধারণ কীভাবে নিচ্ছে?

নাহিদ ইসলাম: আন্দোলনে আমরা অভূতপূর্ব সারা পাচ্ছি। আমরা কিন্তু কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে নই বা নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন এই আন্দোলন পরিচালনা করছে না। এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের আন্দোলন পুরো ঢাকা শহর এবং সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বহু জায়গায় আমরা সমন্বয় করতে পারিনি। কিন্তু সেখানকার দায়িত্বশীল তরুণ সমাজ নিজ থেকেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা মনে করি, এটা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের দাবি। তাদের সবার মনের দাবি, প্রাণের দাবি। আমরা এখানে শুধু সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছি। আমরা যদি এখানে না থাকি, অন্যরা এটা করবে। এ আন্দোলন কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না।

কালবেলা: এই মুহূর্তে কোটা সম্পর্কিত একটি মীমাংসিত বিষয় সামনে আনার ব্যাপারকে কীভাবে দেখেন?

নাহিদ ইসলাম: আমাদেরও একই প্রশ্ন, এই মুহূর্তে কেন মীমাংসিত কোটা ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা হলো। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে, শিক্ষার্থীরা এই ইস্যু তৈরি করেনি। আমরা প্রতিক্রিয়ায় রাজপথে নেমেছি। আদালত এবং সরকারের অবস্থানের কারণে এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হয়েছে। এই দায় মূলত সরকারেরই। তাদের এ বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত ছিল যে, এই মুহূর্তে এরকম সিদ্ধান্ত এলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।

কালবেলা: আন্দোলনে আপনারা কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, এটার ভবিষ্যৎ কেমন মনে হচ্ছে?

নাহিদ ইসলাম: আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে সহযোগিতা পাচ্ছি। তাদের পক্ষ থেকে কোনো রকম বাধা পাইনি এবং ব্যক্তিগতভাবেও আমরা কোনো ধরনের হুমকির সম্মুখীন হইনি। আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক যে, শিক্ষার্থীরা ৭-৮ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে, জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেউ কোনো রকম যোগাযোগ বা আলোচনা করতে এলো না। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে এসে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, অসুস্থ হচ্ছে, পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। সরকার এ বিষয়েও কোনো রকম কথা বলছে না। শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের হয় দেশ ছাড়তে হবে, নয় আন্দোলন সফল করতে হবে। দেশে যুব সমাজের চাকরি নেই, কর্মসংস্থান নেই এবং দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি। এই আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে আমাদের আরও বেশি কর্মসংস্থান প্রস্তুতের প্রয়োজন ছিল, সেখানে সরকারি চাকরির মতো মর্যাদাবান পেশায় কোটা ফিরিয়ে এনে বৈষম্য করা হচ্ছে। এজন্য এখানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করা অর্থহীন। যে কারণে এই আন্দোলন সফল করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই।

কালবেলা: দাবি আদায় না হলে আপনাদের কর্মসূচি কেমন হবে?

নাহিদ ইসলাম: আমরা রাজপথের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি না মানা হলে এর চেয়েও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশীদেরই নয়, বরং রাষ্ট্রের এবং আমলাতন্ত্রের বিষয়। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে আমাদের অভিভাবক যারা আছেন, তাদের সন্তানরা চাকরি পাবেন না। আমরা সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, জাতীয় এবং বৃহৎ স্বার্থের এই দাবিকে আপনারা সমর্থন করুন এবং আপনাদের নিয়েই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকতে চাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

থানায় রক্ষিত বাক্স ভেঙে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত / ৫৭ দেশের সহস্রাধিক মুসলিম নেতা বৈঠকে বসছেন আজ

নতুনবাজার অবরোধ করলেন ইউআইইউর শিক্ষার্থীরা

ছাত্রাবাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ইরানের ভূকম্পন কি গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা?

দিনে কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক? কিডনি সমস্যার লক্ষণ নয়তো

ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পরস্পরবিরোধী বার্তা

‘চা-নাশতার’ খরচে মিলছে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি

তুরস্কে গেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

‘পুরো বিশ্বের সামনে ইসরায়েলকে নত করাবে ইরানের বাহিনী’

১০

ইরান বলছে কূটনীতির দরজা খোলা, ইসরায়েল জানাল হামলা চলবে

১১

ঢাকায় বৃষ্টি হলে বাড়বে তাপমাত্রা

১২

সেপটিক ট্যাংক থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার 

১৩

আগে বিচার ও সংস্কার পরে নির্বাচন : মুজিবুর রহমান

১৪

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৫

২১ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৭

২১ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংসের ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই : ট্রাম্প

১৯

মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র

২০
X