কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৮ এএম
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নেতাকর্মীরা এখন কী করবেন

প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর সিদ্ধান্ত
নেতাকর্মীরা এখন কী করবেন

দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে নিষিদ্ধ হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী। গতকাল প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তার সব অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ফলে এখন থেকে আর এই নামে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ নেই। ফলে দলটির নেতাকর্মীদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে—তারা কি নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, নাকি অন্য দলে সম্পৃক্ত হবেন? তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ। বিষয়টি নিয়ে আপাতত প্রকাশ্যে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না দেখানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া সুযোগ থাকলে নিষিদ্ধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যেতে চান বলেও দলটির শীর্ষ নেতারা আভাস দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি দীর্ঘদিন আলোচনার সুরাহা হয়েছে। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে দলটির নেতাকর্মীরা উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়লে দেশে নতুন করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তাদের তো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসা হবে না। এতদিন পর্যন্ত তারা নিবন্ধিত দল না হলেও তারা অন্তত অবৈধ দল ছিল না। নিবন্ধিত দল হলে তারা কতগুলো আইনকানুন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকে। এখন তো তাদের ওপর বিধিবিধান থাকল না। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের কারণে তাদের যে বদনামটা, ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামটাও ঘুচে গেল। আমি জানি না, এটা তাদের জন্য সুবিধা হলো নাকি সংকট সৃষ্টি হলো। তাদের যখন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয় তখন তারা অনিয়মতান্ত্রিক বা উগ্রবাদের দিকে হাঁটতে পারে। সে আশঙ্কা থেকেই যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরকে বিলুপ্ত করলাম কিন্তু আওয়ামী লীগের ভেতরে যে মৌলবাদের ভূত সেটি তাড়াবে কে? আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, সেটা বাস্তবায়ন হলে তো পাকিস্তানের মতোই মৌলবাদ কায়েম হতো, ব্ল্যাসফেমি ল হতো। হেফাজতের সঙ্গে যে সখ্য, তাদের কারা ঢাকায় আনল? হেফাজতের সঙ্গে আপস করে তারাই তো শিক্ষাক্রম থেকে অনেক গল্প বাদ দিল, তার কী হবে?’

মাঠে প্রতিক্রিয়া নয়, কৌশলে জনমত তৈরি করবে জামায়াত: জানা গেছে, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হলেও এই আদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে মাঠে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় না জামায়াতে ইসলামী। বরং সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা যৌক্তিক না অযৌক্তিক—সে বিষয়ে নানাভাবে জনমত তৈরি করবে দলটি। পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের কোনো সুযোগ থাকলে সেটিও তারা বিবেচনায় নেবেন।

জামায়াত নেতারা জানান, গণতান্ত্রিকভাবে সুস্থ রাজনীতি করা এবং রাজনীতি নিষিদ্ধের খড়্গ থেকে মুক্তি পেতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই তারা রাজপথের আন্দোলনকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন। সেটি এখনই নয়। পরিস্থিতি বুঝে পর্যায়ক্রমে রাজপথের আন্দোলনে নামবেন। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির ডাকা ‘জাতীয় ঐক্যে’ সমর্থন জানিয়েছে দলটি।

যোগাযোগ করা হলে দলটির কয়েকজন নেতা জানান, সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। অতীতে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে ফাঁসি কার্যকর করেছে। সেটিও হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। সুতরাং রাজনৈতিক বিষয়ের ফয়সালা রাজনৈতিকভাবেই হতে হয়। তারা বলেন, দেখা যাক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? কারণ আন্দোলন চলছে। এটি কখনো দীর্ঘমেয়াদি কখনো স্বল্পমেয়াদি হয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে তারা এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির পর গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান সব নাগরিকের সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।’

নিষিদ্ধ হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামও সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ ও স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়েছেন।

জটিল হতে পারে রাজনীতি:

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে সরকার আরও আগে করতে পারত। যুদ্ধাপরাধ বিচারের সময় করতে পারত; কিন্তু তা না করে কেন বর্তমান সময়ের একটি ইস্যুকে বেছে নিয়েছে, সেটি জানি না। এ পরিস্থিতি দেশকে আরও উত্তপ্ত করে দিতে পারে।’

শুধু একটি দলকে নিষিদ্ধ না করে প্রয়োজনে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘এর আগেও উগ্র ও সন্ত্রাসবাদসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সেসব দলের সক্ষমতা তেমন ছিল না। সেজন্য সরকার সফল হয়েছে; কিন্তু এবারের দল এবং প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ জামায়াত একটি বড় রাজনৈতিক দল। অতীতে সংসদ ও সরকারে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব ছিল। তাদের অর্থনৈতিক শক্তিও বৃহৎ। দেশজুড়ে তাদের ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা, আবাসন ও কোচিং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত রয়েছে। দল হিসেবে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, সেগুলোর কী হবে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত গত নির্বাচনে দল হিসেবে অংশ নিতে পারেনি। তবে নিবন্ধন না থাকায় তাদের কার্যক্রম কিন্তু থেমে ছিল না। সরকারের নানামুখী চাপের মুখে থাকায় কখনো গোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে তারা। স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে বিজয়ীও হয়েছে এ দলের প্রার্থীরা। সেজন্য এবার নিষিদ্ধ করায় রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। তারা হয়তো ভিন্ন নামে অথবা অন্য কোনো দলের সাথে বা স্বতন্ত্র হয়ে মাঠে থাকবে।’

জামায়াতের ফেরার কি সুযোগ আছে?

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তুরিন আফরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হলে সেটার আইনগত ভিত্তি রয়েছে। যদি জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো দল, সংগঠন, গোষ্ঠী করা হয়, সরকার চাইলে তাদের নিষিদ্ধ করতে করতে পারে। সংগঠন নিষিদ্ধ করা মানে হচ্ছে—এ সংগঠন কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। কোনোভাবেই এ সংগঠন এক্সিস্ট করে না। নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন যদি কার্যক্রম কোনোভাবে চালু রাখে, তাহলে এর বিরুদ্ধে সরকার যে কোনো রকম স্টেপ নিতে পারে।’

তবে নির্বাহী আদেশে এমন নিষেধাজ্ঞা জারির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে জানিয়ে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডারে নিষিদ্ধ করার সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, পরবর্তী যে কোনো সময়ে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে এটা উইথড্রও করতে পারে। অতীতে কিন্তু হয়েছে। জামায়াতের ছাত্র সংঘকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তারা পরে আবার রিভাইভ করে চলে আসে। এক্সিকিউটিভ অর্ডার পার্মানেন্ট কোনো সিলগালা নয়; সুযোগটা থেকে যায়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লাইভে এসে সংসদ ভেঙে দিলেন পালিয়ে যাওয়া মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড : দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থীকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

মেসি নন, নতুনদের নিয়েই পুয়ের্তো রিকোর মুখোমুখি আর্জেন্টিনা

বিএনপি কোনো দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় না : কফিল উদ্দিন 

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান হাসপাতালে ভর্তি

পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে : পরওয়ার

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : লায়ন ফারুক

ভারতের হারে এশিয়ান কাপ খেলার স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের

সাবেক স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

১০

পর্তুগালসহ যেসব দল আজ নিশ্চিত করতে পারে বিশ্বকাপের টিকিট!

১১

এক দিনের ব্যবধানে দেশে স্বর্ণের দাম আরও বাড়ল

১২

সুস্থ থাকতে খেলাধুলার বিকল্প নেই : মেয়র ডা. শাহাদাত

১৩

ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর নেওয়ায় প্রতিবন্ধীর প্রতিবাদ

১৪

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে মিরাজদের সামনে বিশাল লক্ষ্য

১৫

চাকসুতে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ

১৬

গুমের শিকার পরিবারগুলোর মানববন্ধন / স্বজনদের ফেরত দিন, না পারলে জড়িতদের বিচার করুন

১৭

অগ্নিকাণ্ডে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে : ফায়ার সার্ভিস

১৮

গণভোট মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জামায়াতের

১৯

গাজার ফুটবল পুনর্গঠনে সহায়তার অঙ্গীকার ফিফা সভাপতির

২০
X