ভারি বর্ষণে টানা তৃতীয় দিনের মতো ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর। গতকাল রোববার ভোর থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, অলিগলি ও নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় নগরের অনেক সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। গত দুদিনের মতো এদিনও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়ির সামনের রাস্তা ও উঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত শুক্রবার বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ও রাতের দিকে পানি নেমে গেলেও পরদিন শনিবার ভারি বর্ষণে নগর আবার তলিয়ে যায়। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন জলাবদ্ধতার ব্যাপকতা কম ছিল। তবে তৃতীয় দিন জলাবদ্ধতা আরও প্রকট হয়েছে। নগরের নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল রোববার ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২১৮ মিলিমিটার।
বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, শান্তিনগর, ফুলতলা, বউবাজার, রাহাত্তার পুল, কালা মিয়া বাজার, তুলাতলী, রুবি গেট, মুরাদপুর, সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড, ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদারপাড়া, ঘাসিয়াপাড়া, খতিবেরহাট, বারইপাড়া, মাইজপাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, মিয়া খান নগর, কে বি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাই, দুই নম্বর গেট, আল ফালাহ গলি, পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, সাগরিকা ও আকমল আলী সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, মসজিদ, বিপণিবিতান, দোকানপাট ও সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।
আব্দুল্লাহ নামের একজন কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি জানান, তার বাসা নগরীর ফুলতলা এলাকায়। তিন দিন ধরে পানিতে ডুবে রয়েছে ঘর। রান্নাবান্না কিছু করা যাচ্ছে না। খাটের ওপর কোনো রকম বসে থাকেন। জলাবদ্ধতায় খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের।
মোহাম্মদ শফিক নামের এক রিকশাচালক বলেন, তিন দিনের মধ্যে রোববার সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে। পানির মধ্যে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়।
সুপেয় পানির সংকট: টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগর তৃতীয় দিনের মতো তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। বিদ্যুৎ না থাকা, মোটর নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ভবনের রিজার্ভারে ময়লা পানি ঢুকে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দেয়। এদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও বেশকিছু এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এতে সংকট আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নগরবাসী।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ কালবেলাকে বলেন, ‘বাড়ির মোটরটি প্রায় ১০ ফুট ওপরে বসানো হয়েছে। তবে রান্নাঘর থেকে পানি নামছে না। রান্না করতেই কষ্ট হচ্ছে।’
চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু কালবেলাকে বলেন, ‘এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের মোটর নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্কে ময়লা পানি ঢুকে পড়েছে। সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এলাকাবাসীর বিপদে পাশে থাকার। বিভিন্ন পরিবারে খাবার ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে।’
ভরাপুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বলেন, ‘রোববার সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি ওঠানো যায়নি।’
মন্তব্য করুন